খালেদা জিয়াকে হারিয়ে স্তব্ধ বিএনপি নেতারা
এভারকেয়ার হাসপাতালের করিডর আজ সকাল থেকে ছিল ভারী নীরবতায় মোড়া। কিছুক্ষণ আগেই ভেতরের কনফারেন্স কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে দুঃসংবাদ। আর তার পরপরই দরজা খুলে একে একে বের হতে থাকেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–এর শীর্ষ নেতারা। কারও চোখে অশ্রু, কারও মুখে অস্ফুট দীর্ঘশ্বাস, আবার কেউ কেউ নির্বাক শোক যেন ভাষা কেড়ে নিয়েছে সবার। ছবি: মাহবুব আলম
-
সংবাদ সম্মেলন শেষে হাসপাতাল চত্বরের সেই মুহূর্তে রাজনীতি আর বক্তব্যের জায়গা নেয় নীরবতা। নেতারা কেউ কথা বলছেন না, কেউ সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে শুধু মাথা নিচু করে এগিয়ে যাচ্ছেন। দলের বহু প্রবীণ নেতা চোখ মুছতে মুছতে হাসপাতাল ভবন ছাড়েন। সেই দৃশ্যেই স্পষ্ট এটা কেবল একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষতি নয়, বরং এক দীর্ঘ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি।
-
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। টানা ৩৭ দিনের চিকিৎসা, উদ্বেগ আর অপেক্ষার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
-
সংবাদ সম্মেলন শেষে বেরিয়ে আসা নেতাদের মুখভঙ্গিই ছিল খবরের চেয়েও বেশি কথা বলা। কেউ ফিসফিস করে বলছিলেন, ‘আপসহীন নেত্রী চলে গেলেন’, কেউ আবার দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তা উচ্চারণ করতে পারছিলেন না। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নেতাকর্মীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন, অনেককে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে দেখা যায়।
-
এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনের চিত্র যেন মুহূর্তেই বদলে যায়। সকাল পর্যন্ত যে জায়গাটি ছিল অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠায় ভরা, সংবাদ সম্মেলনের পর তা রূপ নেয় শোকের নিস্তব্ধ মিছিলে। কালো ব্যাজ, লাল চোখ আর ভারী পা ফেলে নেতারা যখন গাড়িতে উঠছিলেন, তখন ক্যামেরার ফ্ল্যাশও যেন নীরব হয়ে পড়ে।
-
এই দৃশ্য শুধু একটি মৃত্যুসংবাদ নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগের অবসানের দৃশ্যমান প্রতিচ্ছবি। সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়ে গেলেও শোক যেন শেষ হচ্ছে না। এভারকেয়ার হাসপাতালের করিডর থেকে বেরিয়ে আসা সেই নেতাদের নিঃশব্দ চোখই বলে দিচ্ছিল, আজ তারা শুধু দলীয় নেতা নন; তারা হারিয়েছেন তাদের নেত্রীকে।