স্মৃতিতে আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খালেদা জিয়ার নামটি এক অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে তিনি শুধু দেশের গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্তে নয়, বরং সাধারণ মানুষের হৃদয়েও বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন, সংগ্রাম ও নেতৃত্বের গল্পগুলো স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে আছে। ছবি: এএফপি
-
খালেদা খানম পুতুল থেকে অনেকটা যেন আচমকাই খালেদা জিয়ায় পরিণত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান। এ ছাড়া তিনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন।
-
কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে পারেননি। রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় ‘স্বশিক্ষিত’ শব্দটি লেখা হয়।
-
খালেদা জিয়া ১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মূলত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়েই খালেদা জিয়া জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে।
-
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে, যখন তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির ছায়ায় ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন পরিবারের প্রতি অটল ও সহমর্মী। সংসার ও সন্তান পালনকে কখনোই নিজের স্বপ্ন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্তরায় হিসেবে দেখেননি। এই ব্যালান্সেই তার রাজনৈতিক শক্তি এবং সবার নজর কেড়েছিল।
-
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশটি এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। তিনি প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অম্লান ছাপ রেখে যান।
-
১৯৯৮ সালের ২৮ জুলাই দক্ষিণ ঢাকার বন্যাকবলিত কামরাঙ্গীর চর শহরতলিতে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: এএফপি
-
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৯ সালের ৩ মে ঢাকায় সরকারবিরোধী এক গণ-মিছিলের নেতৃত্ব দেন।
-
২০০৭ সালের ৩ গ্রেফতারের পর প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হাত নাড়ছেন। ১৯৯১ সাল থেকে দুবার দেশ শাসন করা এবং দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া খালেদা জিয়াকে ৩ সেপ্টেম্বর তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
-
২০০৮ সালের ২১শে নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এবং খালেদা জিয়া। সেখানেই ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলেন তারা।
-
২০০৯ সালের ৯ মে শেখ হাসিনার স্বামী এম.এ. ওয়াজেদ মিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
-
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আটক থেকে মুক্তি পাওয়ার পর স্বামীর কবরের পাশে পৌঁছানোর সময় কর্মী ও সমর্থকদের দ্বারা বেষ্টিত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হাত নাড়িয়েছিলেন।
-
সরকারের নীতি, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সামাজিক উদ্যোগ সব ক্ষেত্রেই তার নাম গেঁথে আছে। যদিও রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী তিনি হয়েছেন, তবু জনমনের কাছে তার দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে আছেন।
-
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম শুধু ক্ষমতার জন্য ছিল না; বরং এটি ছিল একটি নারীর নিজের অবস্থান তৈরি করার সংগ্রাম। সমালোচনা, চাপ এবং প্রতিকূলতার মুখেও তিনি হাল ছাড়েননি। অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও চাপে পড়েও তার দৃঢ় মনোবলই তাকে দীর্ঘদিন রাজনীতির মহলে রাখে।
-
স্মৃতিতে খালেদা জিয়া মানে শুধু একজন রাজনীতিবিদ নয়; তা মানে সাহস, দৃঢ়তা ও সমঝোতার এক অনন্য সমাহার। নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে তার নাম অনস্বীকার্য। তিনি যে ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে আছেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে একজন নারী কীভাবে রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়নে প্রভাব ফেলতে পারে, তার সর্বোত্তম উদাহরণ হয়ে।