মিরসরাইয়ে মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের বাজিমাত

এম মাঈন উদ্দিন
এম মাঈন উদ্দিন এম মাঈন উদ্দিন , উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০২:৩৯ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় মিষ্টি আলু চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। ফলে দিন দিন এই আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা। বিস্তীর্ণ চরে বিশেষ করে বালু চরে ফসলটি বেশি আবাদ হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য জমিতেও আবাদ জমির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই লাভের মুখ দেখছে। ধান, সবজির পাশাপাশি মিষ্টি আলুতে বাড়তি আয় হচ্ছে কৃষকদের।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। যার অধিকাংশ চাষ হয়েছে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ফেনী নদীর পাড় ঘেঁষা পশ্চিম জোয়ার এলাকায়। এছাড়া মঘাদিয়া ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে আবাদ হয়েছে।মিষ্টি আলু অত্যন্ত পুষ্টিকর ফসল। সাধারণত বালু মাটিতে আলু/কন্দাল জাতীয় ফসল ভালো হয়।

সরেজমিনে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ বালু চরে মিষ্টি আলুর আবাদ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। দুচোখের দৃষ্টি যতটুকু যাবে চোখে পড়বে আলু ক্ষেত। স্থানীয় কৃষকরা কেউ জমিতে সেচের পানি দিচ্ছেন, কেউ পরিচর্চা করছেন। একটা সময় এই চরের জমিগুলো খালি পড়ে থাকলেও এখন কৃষকরা এসব চরে মিষ্টি আলু চাষাবাদ করেছেন। এরই মধ্যে ফলন আসতে শুরু করেছে এবং বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কথা হয় স্থানীয় কৃষক আলমগীর হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফিরোজ হোসেন ও মোবারকের সঙ্গে।

আরও পড়ুন

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ বছর আমি দুইশ শতক জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। এতে আমার প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরই মধ্যে এক লাখ টাকার আলু বাজারে বিক্রি করেছি। আশা করছি আরও ৩ লাখ টাকার আলু বিক্রি করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এখন প্রতি মণ আলু বাজারে ১২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একবারে জমি থেকে ন্যুনতম দুই টন আলু উত্তোলন করা হয়। এরপর পিকআপ যোগে ফেনী শহরে নিয়ে পাইকারি বিক্রি করি।’

কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, ‘এবার আমি ২৬০ শতক মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ ফলনও ভালো হয়েছে। আমাদের জমিতে উৎপাদিত আলুতে কোনো ধরনের রাসায়নিক ও ফরমালিন থাকে না। এতে এখানকার উৎপাদিত আলুর ভালো চাহিদা রয়েছে। আমি প্রায় ১০ বছর ধরে মিষ্টি আলুর আবাদ করে আসছি। বছরের অন্য সময় ধান, সবজি চাষ করি। এসময় ওই জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করি। আলু উত্তোলন করে পিকআপ ভ্যানে ফেনী, কুমিল্লা চৌমুহনী ও নিমশা বাজারে নিয়ে বিক্রি করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিপিস আলুর ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবার আমার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে, আশা করছি ৫ লাখ টাকার মিষ্টি আলু বিক্রি করতে পারবো।’

পশ্চিম জোয়ার এলাকার চাষী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে কৃষি পেশার সঙ্গে জড়িত। এবার দেড় একর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হবার আশা করছি।’

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (ব্লক নং ১নং ভালুকিয়া) সাবিহা উম্মে তাছনিম প্রমি বলেন,‘ এলাকার কোথাও যাতে কোনো পতিত জমি না থাকে, সেই লক্ষ্যে সব পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগে এসব নদীর চর পতিত থাকলেও এখন এসব চরে মিষ্টি আলুসহ, মুলা, আলু, বেগুন ও মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে কৃষকরা এর সুফলও পেয়েছেন। আমরা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে জানা গেছে, মিষ্টি আলু চাষাবাদে তেমন একটা সার প্রয়োগ করতে হয় না। তাছাড়া এ ফসলে তেমন কোনো রোগ বালাইও দেখা যায় না। তাই এই আবাদে অল্প পুঁজি ও শ্রমে অধিক লাভ পাওয়া যায়। বিশেষ করে চর এলাকায় মিষ্টি আলুর চাষাবাদ বেশ লাভজনক।

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন সময় উপজেলা কৃষি অফিসের পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করে থাকি। বিগত ৮-১০ বছর ধরে দেখছি আমার গ্রাম পশ্চিম জোয়ারের বিস্তীর্ণ চরে কৃষকেরা মিষ্টি আলু চাষ করে লাভবান হচ্ছে।’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলায় দিন দিন মিষ্টি আলু চাষ বাড়ছে। বিশেষ করে চর এলাকায় মিষ্টি আলু চাষ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কৃষকদের অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ কম করতে হয়। বাজারদরও ভালো। কৃষকরা বিস্তীর্ণ বালু মাটির এলাকা মিষ্টি আলু চাষের আওতায় এনেছেন। এলাকার মাটি ও আবহাওয়া মিষ্টি আলু চাষের অনুকূল হওয়ায় কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন।’

আরও পড়ুন

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।