দেশজুড়ে

দেড় মাসের ব্যবধানে মা-মেয়েকে হত্যা, কথিত স্বামী গ্রেফতার

রংপুরের পীরগঞ্জে যাত্রাগানের শিল্পী দেলোয়ারা বেগম ঝিনুককে (৩৬) হত্যার দেড় মাস আগে তার পাঁচ বছরের শিশুকন্যা সাইমাকেও হত্যার পর মরদেহ পুঁতে রাখেন ঝিনুকের কথিত স্বামী আতিকুর রহমান (৩৫)। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অর্ধগলিত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে পীরগঞ্জ থানার বড় বদনারপাড়া গ্রামে অভিযুক্তের বাড়ির পেছন থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত আতিকুর রহমানের বাড়িতে আগুন দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দিলালপুর গ্রামের রেজাউল করিম তার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম ঝিনুককে প্রায় দুই বছর আগে তালাক দেন। তারপর থেকেই ঝিনুক যাত্রাগানের ভাসমান শিল্পী হিসেবে জীবনযাপন করে আসছেন। তার পাঁচ বছরের শিশুকন্যা সাইমাও সঙ্গে থাকতো। পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের বড় বদনাপাড়ার জুয়াড়ি আতিকুর রহমান মাঝেমধ্যে যাত্রাগানের শিল্পী হিসেবে ঝিনুককে ভাড়া করে আনতেন। পাশাপাশি তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতেন।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঝিনুকের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় মরদেহের একটু দূরে কাপড়ভর্তি একটি ব্যাগে (লাগেজ) মোবাইল নম্বর লেখা কাগজ, সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে আতিকুর রহমানের গতিবিধির ওপর নজর রাখে পুলিশ। শনিবার সকালে আতিকুর বোরকা পরে পালানোর সময় পুলিশ তাকে কাবিলপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। পরে আতিকুরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে ঝিনুকের কেটে নেওয়া মাথাটি করতোয়া নদীপাড়ের টোংরারদহ থেকে উদ্ধার করা হয়।

এ খবরটি প্রকাশ হলে ঝিনুকের সাবেক স্বামী রেজাউল করিম মোবাইলে পীরগঞ্জ থানার ওসিকে বলেন, তার মেয়ে সাইমা ঝিনুকের সঙ্গে থাকতো। জানতে চান তার মেয়ে কোথায়।

পরে পুলিশ আতিকুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি শিশুটিকে হত্যার কথা জানান। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) অনন্ত কুমার বর্মন বাদী হয়ে আতিকুরকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি) এমএ ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের পর স্বজনরা ঝিনুকের মরদেহ নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে পুলিশের উদ্যোগে শনিবার রাতে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া সরকারি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত ঝিনুক নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের পশ্চিম গোলমুন্ডা ফকিরপাড়ার রবিউল ইসলামের মেয়ে।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয়রা রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বড় বদনাপাড়া গ্রামে আতিকুলের বাড়িতে যান। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় তারা আতিকুলের ফাঁসির দাবি জানান।

জিতু কবীর/এসআর/জিকেএস