আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
Advertisement
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় দলের কার্যালয় আল রাজী কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে গণঅধিকার পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন।
দেশব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদ শুরু থেকেই গণহত্যার বিচার বিলম্বের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এছাড়া জনগণকে গণহত্যার বিচারে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে দেশব্যাপী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হবে। এছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে।
Advertisement
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক আন্দোলন সরকারের স্থিতিশীলতার পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে বুলডোজার দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ সহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যেখানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, সেখানে কোন আওয়ামী লীগ নেই। অথচ সচিবালয়, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ প্রশাসন ও সরকারের সব সেক্টরে যেসব আওয়ামী সুবিধাভোগীরা রয়েছে, তারা বহাল তবিয়তেই আছেন। গণঅভ্যুত্থানের ৬ মাস পরেও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে এই ধরনের ঘটনা সরকারের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ও সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করার শামিল।
তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয় যে, সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের মনে প্রশ্ন, সিটি করপোরেশন বা সরকারি বুলডোজার কারা সরবরাহ করলো? এই ঘটনার কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে যেসব নেতিবাচক বার্তা গেছে সেগুলো হলো- ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার বাংলাদেশকে এখনো স্থিতিশীল করতে পারেনি, বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা কম, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে বিদেশি ক্রেতার সংকট, বাংলাদেশে অবস্থানরত ও আসতে আগ্রহী বিদেশি পর্যটকরা আতঙ্কিত হতে পারে ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হওয়ার পরে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের অবস্থান সম্পর্কে জানি না। বড় বড় ডেভিলরা তো পালিয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদের ৩ মাস নিরাপদে অবস্থান করার পরেও কেন তাকে গ্রেফতার করা যায়নি? আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড ও শেখ পরিবারের সদস্যরা কাদের সহায়তায় দেশ ছেড়েছে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি এসব তদন্তে কোনো কমিটি গঠন করেছে? না করার রহস্য সম্পর্কে আমরা জানতে চাই। অপারেশন ডেভিল হান্টকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এর মাধ্যমে যেন আওয়ামী লীগের সাধারণ ও নিরীহ কোন কর্মী-সমর্থককে হয়রানি না করা হয়। শুধু অপরাধীরাই যেন অপারেশন ডেভিল হান্টের অন্তর্ভুক্ত হয়। অন্যথায় গণগ্রেফতার ও গণহয়রানি শুরু হলে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এই সুযোগে মামলাবাজি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটতে পারে।
উপদেষ্টারা নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতি নিজেদের আর্শীবাদ ব্যক্ত করে এবং নতুন রাজনৈতিক দল করতে আগ্রহীদের নানা কর্মসূচিতে ধারাবাহিকভাবে উপস্থিত থেকে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন বলে মনে করেন রাশেদ খাঁন। এজন্যই বিভিন্ন জায়গা থেকে আগামী নির্বাচন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজনের দাবি উঠছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Advertisement
রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা সরকারকে বলবো, গণঅভ্যুত্থানে এই দেশের সব শক্তি অংশ নিয়েছে। কোনো একটি অংশের কাছে আপন হতে গিয়ে বাকিদের বিরাগভাজন হবেন না। আপনারা সবার, সবার সঙ্গেই আপনাদের আচরণে নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। নতুন যারা দল করতে চায়, আমরা তাদেরকে সাধুবাদ ও স্বাগত জানাই। তবে আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায়, সহযোগিতায় ও আর্শীবাদে নতুন কোনো দল গঠিত হলে, আপনারা নিজেদের অবস্থান হারাবেন।
গণঅধিকার পরিষদের ৫ দফা:১. জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিগত ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদদের সঠিক তালিকা তৈরি, ক্ষতিপূরণ এবং যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
২. জুলাই গণহত্যায় জড়িত এবং বিদেশে পলাতক গণহত্যার মাস্টারমাউন্ড শেখ হাসিনাসহ সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় গণহত্যায় জড়িতদের রাজনীতি নিষিদ্ধের পদক্ষেপ নেওয়া।
৩. ফ্যাসিবাদের আমলে উন্নয়নের নামে লুটপাট, অর্থ পাচারে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করা।
৪. জন-আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কার ও জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর সংস্কার নিশ্চিতে অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।
৫. বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেজিমে সংগঠিত গুম-খুন ও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ও উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, হাবিবুর রহমান রিজু, সহ-সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলু খান, প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।
আরএএস/এএমএ/এএসএম