দেশজুড়ে

ডাক্তারি পরীক্ষায় সম্মতি দেননি ভুক্তভোগী নারী, মামলা নিয়ে শঙ্কা

কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারীর সম্মতি না থাকায় গত পাঁচ দিনেও সম্পন্ন হয়নি ডাক্তারি পরীক্ষায়। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় ধর্ষণ মামলাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা না হলে ধর্ষণ হয়েছে প্রমাণ করা কঠিন হবে। এতে ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যেতে পারেন।

এদিকে ফজর আলীর ভাবি রাবেয়া বেগম এ ঘটনার তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করে বলেছেন, আট ভাই-বোনের মধ্যে ফজর আলী তৃতীয় আর শাহ পরান পঞ্চম। সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই নারীর সঙ্গে তাদের দুই ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। যাতায়াতও করতেন তারা। ওইদিন ফজর আলীকে খবর দিয়ে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

পুলিশ ও মেডিকেল সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর শুক্রবার ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে ফজর আলীকে আসামি করে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন। এরপর শনিবার (২৭ মে) দুপুরে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ওই নারীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় থানা পুলিশ। সেখানে পরীক্ষা প্রক্রিয়া শুরুর আগেই ভুক্তভোগী নারী তার মত বদলান। তিনি কর্তব্যরত চিকিসককে জানিয়ে দেন, পরীক্ষাতে তার সম্মতি নেই। যে কারণে ধর্ষণ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে পারেননি চিকিৎসক।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বলেন, অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ধর্ষণের সময় ভুক্তভোগীর পরনে থাকা পোশাকসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় সম্মতি দিয়ে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে মত বদলানোর কারণে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন: মামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ভুক্তভোগী নারীর ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে বিবস্ত্র নারীর ভিডিও ধারণ করেন তিনজন

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক ডা. সারমিন সুলতানা বলেন, ‘এটা অন্যান্য পরীক্ষার মতো না। জোর করে করানোও সম্ভব নয়। যেহেতু ভুক্তভোগী অ্যাডাল্ট, এই ক্ষেত্রে তার অনুমতি প্রয়োজন ছিল। তিনি লিখিতভাবে আমাদের জানিয়েছেন, এই পরীক্ষায় তার সম্মতি নেই। যে কারণে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি।’

এ বিষয়ে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন বলেন, ধর্ষণের শিকার নারী ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে অপারগতা প্রকাশ করলে এর সুবিধা আবশ্যই ধর্ষক পাবেন। ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতার তৈরি হবে। মোকদ্দমা পরিচালনা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হবে।

এদিকে প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে রেখে চিকিৎসার দিচ্ছে পুলিশ।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, অভিযুক্ত ফজর আলীকে অর্থোপেডিকস বিভাগে সিট খালি না থাকায় ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে অর্থোপেডিকস বিভাগ।

ওই বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক এস এম সাইফুল হাছিব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, তার হাতে ও পায়ের চারটি স্থানে হাড় ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা-ছেঁড়া রয়েছে। ক্ষত শুকানোর পর অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে কতদিন সময় লাগবে এ বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছুই জানাতে পারেননি।

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই নারী প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন। এসময় তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তার বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এসময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান।

একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই নারীকে হেনস্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় শুক্রবার (২৭ জুন) মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে আসামি করে মুরাদনগর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এরপর অভিযানে নেমে রাজধানীসহ জেলার স্থান থেকে প্রধান অভিযুক্তসহ ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পরে রোববার (২৯ জুন) বিকেলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমন ও তার তিন সহযোগীসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মুরানগর থানায় পৃথক একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী।

ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের কুমিল্লা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মোমিনুল ইসলাম তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/এএসএম