দেশজুড়ে

২ ভাই পড়তো একই স্কুলে: সকালে স্কুল ছুটি হওয়ায় বেঁচে গেল ছোট ভাই

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৮ম শ্রেণির ছাত্র তানভীর আহমেদের (১৪) গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চলছে শোকের মাতম। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ছোট বেলা থেকেই তানভীর মেধাবী ছিল। দুই ভাইয়ের মধ্যে তানভীর ছিল বড়।

তানভীর আহমেদ উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নগরভাতগ্রাম গ্রামের রুবেল মিয়ার ছেলে। তবে তানভীরের পড়াশোনার সুবাদে পরিবারের সবাই উত্তরায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। তানভীরের বাবা সেখানেই ব্যবসা করতেন। তার ছোট ভাই তাশরীফও একই স্কুলে পড়তো।

তানভীরের এলাকায় বইছে শোকের মাতম। আশপাশের শতশত লোকজন ভিড় করছে বাড়িতে। ঢাকা থেকে তানভীরের বা-মা লাশ নিয়ে রওনা হয়েছেন। সোমবার সকালে জানাজা শেষে লাশ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পরিবার সূত্র জানায়।

নিহতের চাচাতো ভাই খাইরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সকালে দুই ভাই স্কুলে যায়। তাশরীফের স্কুল ছুটি হওয়ায় বাড়িতে চলে আসে। আর বড় ভাই তানভীর ছুটি না হওয়ায় ক্লাস করতে থাকে। স্কুলে হঠাৎ বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমি তানভীরকে দেখে প্রথমে চিনতে পারি। পরে তাকে ঢাকার বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায় উদ্ধারকারীরা। সেখান থেকে রাতে আমরা লাশ বুঝে নিই।

তিনি বলেন, তানভীর সব সময়ই ক্লাসের টপার ছিল। অনেক মেধাবী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবে, মানুষের সেবা করবে। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই এমন মৃত্যু হলো। আমরা তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। রাতেই নিহতের লাশ বাড়িতে আসবে।

নিহত তানভীরের চাচাতো ভাই সজীব জাগো নিউজকে বলেন, তার চাচা রুবেল মিয়া ও চাচি লিপি বেগম সন্তানকে ভালো লেখাপড়া ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি করেছিলেন। তার চাচা ঢাকায় ব্যবসা করেন। তানভীরের ছোট ভাইও সেখানে পড়াশোনা করতো। গ্রামের বাড়িতে শুধু দাদি থাকতেন। ছুটিতে যখন গ্রামে আসতো তখনও পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতো। সোমবার বিমান দুর্ঘটনায় তানভীরের মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তার স্বজনদের কান্নায় চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, তানভীর গত কোরবানির ঈদের সময় বাড়িতে এসেছিল। সে সময় তার আরেক ভাইয়ের বিয়েতে দেখা হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিল।

স্থানীয় আশিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, তানভীর খুব ভালো মানুষ ছিল। পড়ালেখায় অনেক মেধাবী ছিল। আমরা তার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমরা সবাই মর্মাহত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তানভীরের পরিবারের পাশে আমরা থাকবো।

এদিকে মেধাবী এই ছাত্রের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক এ বি এম আরিফুর ইসরামসহ অনেকেই।

আব্দুল্লাহ আল নোমান/এমআরএম/এএমএ