পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে সংস্কার নিশ্চিত করে জাতীয় নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়ে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের দাবি জানিয়েছে তারা।
রোববার (১০ আগস্ট) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ডা. তাহের। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে সিইসির সঙ্গে আলাপকালে দেশের কথা, নির্বাচনের কথা উঠে এসেছে।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনপিআর পদ্ধতি হচ্ছে একটি আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা। যে পদ্ধতিতে প্রতিটি দলের সারাদেশে পাওয়া মোট ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন হবে। জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে আনুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা তুলে ধরে ডা. তাহের বলেন, সংসদে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে পিআর হতে হবে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে। সেই ইস্যুতে আমরা আন্দোলন করবো। কারণ হচ্ছে, ৫৪ বছরের নির্বাচনের পদ্ধতিতে আমরা দেখেছি এখানে ফেয়ার ইলেকশন কখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
ফেব্রুয়ারির ফার্স্ট উইকে নির্বাচনে আপত্তি নেইসম্প্রতি ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা খসড়া প্রকাশ করে ইসি। এ নিয়ে দাবি আপত্তি জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল রোববার। বিষয়টি নিয়ে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে তৈরি হয়নি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার পরিপূর্ণ করার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির ফার্স্ট উইকে নির্বাচনে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই।
জামায়াত নায়েবে আমির বলেন, আমরা বলেছি জামায়াতে ইসলামী সবসময় নির্বাচনের পক্ষে। ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে সেই তারিখের ব্যাপারে জামায়াতের মৌলিক কোনো আপত্তি নেই। এ পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের ভাষ্য, কারণ আমরা আগে থেকেই বলছিলাম যে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে, এপ্রিলে হতে পারে। পরে আমাদের আমির আরেকটা মিটিংয়ে বলেন যে এটা রমজানের আগে হলেই ভালো হয়।
জামায়াতের অবজারভেশনসংস্কার, বিচার করে নির্বাচনের পক্ষে মত জামায়াতে ইসলামীর। অতীতে গণতান্ত্রিক সরকার দলসহ অংশীজনের সঙ্গে মিলেই একটা পরিবেশে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এবার অন্তর্বর্তী সরকার আগে একটু আলাপ আলোচনা করলে সেটা সবার জন্য একটা নিজস্বতার বহিঃপ্রকাশের একটা সুযোগ ছিল যোগ করেন তিনি। বলেন, এটা আমাদের একটা অবজারভেশন। দুই নম্বর অবজারভেশন হচ্ছে নির্বাচনের তারিখ বা মাস নির্ধারিত হয়েছে। ইসি ফাইনাল ডেটটা ডিক্লেয়ার করবে। যেটা উনারা বলেছেন ডিসেম্বরে ডিক্লেয়ার করবেন। হাওভার। কিন্তু নির্বাচনের জন্য তো সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে একটা ক্রেডিবল ফেয়ার ফ্রি পার্টিসিপেটরি ইলেকশন। এটাই গণতন্ত্রের দাবি। এদেশের মানুষের দাবি। গত তিনটি পরপর নির্বাচনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মানুষের ভেতরে এখনও সে শঙ্কাটা কাটেনি যে নির্বাচন ফেয়ার হবে কি না। তিনি বলেন, সে জন্য আমরা বলেছি সরকারকে অনেকগুলো উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে মানুষ কনফিডেন্স পায় যে এবার নির্বাচনটি সঠিক হবে। আমরা ভোট দিতে যেতে পারবো।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে ভোট নিয়ে আপত্তি নেই, তবে পিআর পদ্ধতি চাই: ডা. তাহেরফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশে অরাজকতা বাড়বেনির্বাচনে মানুষের আস্থা ফেরানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনজামায়াত নেতা ডা. তাহের বলেন, দ্বিতীয় অবজারভেশনের বিষয়ে বলেন, দুই নম্বর সরকার কমিটমেন্ট দিয়েছিল। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। তাহলে নির্বাচনের আগেই আরও দুটো কাজ সারতে হবে। একটা হচ্ছে বিচারকে দৃশ্যমান করতে হবে। সিম্বলিক করতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কারের ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে। যেটি কিছুটা হলেও ফেয়ার ইলেকশনের একটা আস্থা বা ফেয়ার ইলেকশন হবে, এরকম একটা কনফিডেন্স মানুষের হবে। দাবি খুব স্পষ্ট যে আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু নির্বাচনকে ফেয়ার করার শর্তটাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এই নেতা বলেন, সে জন্য ঐকমত্য কমিশনের যে সুপারিশ তার আলোকে আইনি ভিত্তি দেওয়া, বাস্তবায়ন করা এবং সে ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ডা. তাহের বলেন, আমরা আজকে সিইসিকে বলেছি যে নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। খেলার মাঠটা সমান হতে হবে। কারণটা উঁচা-নিচা, এটা হবে না। সিইসি ভালো নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। উনি (সিইস) বলেছেন যে আমার দিক থেকে আমি সাধ্যমতো এই ব্যাপারে সিরিয়াস থাকবো। তার জীবন থাকতে হলেও এটাকে ফেয়ার ইলেকশনের জন্য যে ভূমিকা নেওয়ার সেটা নেবো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর আস্থা রাখতে চায় জামায়াতসবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে প্রশাসনসহ সবখানে দক্ষ, নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবিও জানান এই জামায়াত নেতা। আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারে আমাদের আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, উনি এক্ষেত্রেও বলেছেন যে সীমাবদ্ধতা আছে। সিইসি আশ্বস্ত করেছেন, তারা হোপফুল যে সবাই মিলে এরকম একটা পরিস্থিতি তারা ইম্প্রুভ করতে পারবে। কিন্তু আমরা আমাদের কনসার্ন যেটা সেটা আমরা পেশ করছি যে এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও সুষ্ঠু নির্বাচনের লেভেলে পৌঁছায়নি।
ইসিকে সেকেন্ড রাউন্ড, সেমিফাইনালে দেখবে জামায়াতবর্তমান কমিশনের প্রতি এখন পর্যন্ত কমিশনের যতটুকু ভূমিকা, তাতে অসন্তোষ নেই জামায়াতের। ডা. তাহের বলেন, এখন পর্যন্ত সে ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এটা হচ্ছে ফার্স্ট রাউন্ড, সেকেন্ড রাউন্ড, (ফাইনালের আগে) সেমিফাইনাল তারা কীভাবে করে সেটা আমরা দেখবো। যদি এটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য উপযোগী হয় এবং যা যা এদেশের মানুষ আশা করে সুস্থ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; সেটা যদি উনারা করেন তাহলে তো কোনো আপত্তি নেই।
এমওএস/এসএনআর/জেআইএম