বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে আরও অনেক আগেই। নানা ওঠা-নামার পালাও চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। ফারুক না বুলবুল? আশরাফুল হক, আলী আসগর লবি না কুতুবউদ্দীন, আবার ঘুরেফিরে এক সময় মনে হচ্ছিল মাহবুব আনামই শেষ কথা।
কিন্তু তারপরও পাল্টাচ্ছে দৃশ্যপট। বদলেছে সম্ভাব্য নতুন সভাপতির নামও। এখন সর্বশেষ পর্দায় দেখা যাচ্ছে দুজনকে; আমিনুল ইসলাম বুলবুল আর তামিম ইকবাল। আমিনুল ইসলাম বুলবুল সরাসরি নির্বাচনের ঘোষণা দেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়ন পেয়ে বোর্ডে আসবেন এবং সভাপতির দাবিদার হবেন।
যদি তাই হয়, বুলবুল যদি এনএসসির মনোনীত প্রার্থী হয়ে বোর্ডে আসেন, তাহলে সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে তার প্রতিপক্ষ হবেন তামিম ইকবাল। জাতীয় দলের এ সাবেক ওপেনার এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি নির্বাচন করবেন এবং সভাপতি হওয়ার দৌড়েও থাকবেন।
আপাতত ক্রিকেট পাড়ায় এ দুটি নামই শোনা যাচ্ছে। তবে বুলবুল ও তামিমের বাইরে আর কেউ সভাপতি হবেন না, হতে পারবেন না, হওয়ার সম্ভাবনা নেই- কেউ নিশ্চিত করে এমন কথা বলছেন না। বলাটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, নির্বাচনে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এর পরতে পরতে অনিশ্চয়তা। কখন কি হয়? কে কোন দিক থেকে শিরোনামে উঠে আসেন? আবার কে বা কারা আলো থেকে অন্ধকারে তলিয়ে যান, তা নিশ্চিত করে বলা খুব কঠিন।
সবার জানা ঢাকার প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও তৃতীয় বিভাগ মিলে ৭৬ ক্লাবের কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হবেন ১২ পরিচালক। এখন ঢাকার ক্লাব পাড়ায় চলছে নির্বাচনী মোর্চা তৈরির কাজ। ভেতরে ভেতরে সমীকরণ, নানান হিসাব-নিকাশ চলছে।
যাকে কেন্দ্র করে এতদিন একটি বড় মোর্চা তৈরি হয়েছিল, সেই মাহবুব আনাম নির্বাচন না করার ঘোষণা দেওয়ায়, অবশ্য নির্বাচনী তৎপরতা খানিক কমেছে। কারণ মাহবুব আনামের পক্ষের শক্তিই বেশি। বড়। তাদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে জিতে আসাও কঠিন। কারণ ৭৬ ক্লাবের বড় অংশটা মাহবুব আনামদের পক্ষে। তাই মাহবুব আনাম নির্বাচন করুন কিংবা নাই করুন, তার বিপক্ষ প্যানেল বা মোর্চা থেকে নির্বাচন করে জিতে আসা কঠিন।
এদিকে মাহবুব আনামের মিত্ররা তাকে ধরেই প্যানেল সাজানোর চিন্তা করছেন। এখনো ক্লাব পাড়ার বেশিরভাগ কাউন্সিলরের মুখে মাহবুব আনামের নামই উচ্চারিত হচ্ছে বেশি। তবে মাহবুব আনাম অবশ্য তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো ঘোষণা দেননি। জাগো নিউজসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচন করবেন না। কাউন্সিলরও হবেন না।
মাহবুব আনাম নির্বাচন করলে আর কাউন্সিলর হলে, এক হিসাব। আর না হলে অন্য সমীকরণ। তাই হিসাব-নিকাশ করতে গেলে মোহামেডান তথা ক্রিকেট পাড়ার এ ঝানু সংগঠককে ধরে ও বাইরে রেখেই সমীকরণ তৈরির কাজ চলছে। জানা গেছে, ৭৬ ক্লাবের অন্তত ২৫-২৬ জন পরিচালক পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। শেষ পর্যন্ত তাদের ক’জন নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকবেন? সেটাই দেখার।
তবে এ মুহূর্তে ঢাকার ক্লাব কর্তাদের মুখে কিছু নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। সেই নামগুলো হলো- মাহবুব আনাম, আজিজ আল কায়সার টিটো, রফিকুল ইসলাম বাবু, ফাহিম সিনহা, ইফতিখার রহমান মিঠু, তামিম ইকবাল, ইশরাক হোসেন, লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, মাসুদুজ্জামান, শাহনিয়ান তানিম ও ইশতিয়াক সাদেক।
এই ১১ জনের মধ্যে থেকে দুটি নাম কাটা পড়তে পারে। মাহবুব আনাম যদি শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পাল্টে নির্বাচন করেন, তাহলে তিনি পরিচালক হবেন। তা নিয়ে সংশয়ের কিছু নেই। আর না করলে তিনি থাকবেন না। এছাড়া লোকমান হোসেন ভুইয়ার থাকাও পুরোপুরি নিশ্চিত নয় বলে দাবি একটি মহলের। জানা গেছে, আজ-কালের মধ্যে লোকমান হোসের ব্যাপারটি নির্ধারিত হবে।
এর বাইরে দুই অন্যতম শীর্ষ কর্পোরেট হাউজ বসুন্ধরা ও গাজী গ্রুপের হিসাবটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এমনিতে শোনা যাচ্ছিল, বসুন্ধরা গ্রুপ বা ‘টি স্পোর্টস’ থেকে শাহনিয়ান তানিম ও ইশতিয়াক সাদেক দুজনই নির্বাচন করবেন এবং তাদের হাতে যেহেতু বেশ কিছু ক্লাব আছে, তাই তাদের দুজনারই জেতার সম্ভাবনাও বেশি।
কিন্তু জানা গেছে, ১২ জনের কোটা পূরণের জন্য শাহনিয়ান তানিম ও ইশতিয়াক সাদেকের একজন নাও থাকতে পারেন। তাদের যে কোনো একজনের পরিচালক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে গাজী গ্রুপের এখনো কাউন্সিলরশিপই নিশ্চিত হয়নি। সালাউদ্দীন আর আদনান রহমান দিপন দুজনার নামই শোনা যায়। শোনা যাচ্ছে, তারা দুজনই নির্বাচন করার কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে।
পাশাপাশি ক্রিকেট পাড়ায় আরও একটি নতুন নামও উচ্চারিত হচ্ছে কারও কারও মুখে। তিনি মিরপুর সিটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মঈন (জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও বিএনপি নেতা আমিনুলের বড় ভাই)। জানা গেছে, মঈন বিসিবিতে কাজ করতে আগ্রহী এবং ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন নির্বাচনের জন্য।
ওপরে যাদের নাম বলা হলো- তারাই কিন্তু শেষ কথা নয়। এর বাইরেও প্রার্থী আছেন আরও কজন। তারা কেউই নতুন নন। দীর্ঘদিন ক্রিকেটের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছেন। ক্লাব পাড়ার পরিচিত মুখ এক সময় মোহামেডানের অন্যতম শীর্ষ ক্রিকেট কর্তা লুৎফর রহমান বাদল বেশ শক্ত প্রার্থী হতে পারেন।
তার সাথে উত্তরার বোরহান হোসেন পাপ্পু ও জিয়াউর রহমান তপুও উৎসাহী। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মালিক লুৎফর রহমান বাদলের বোর্ডে থাকার সম্ভাবনা আছে যথেষ্ট। আর পাপ্পু ও তপুর যে কোনো একজনকে প্রথমবারের মতো পরিচালক হিসেবে বোর্ডে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এআরবি/আইএইচএস