দেশজুড়ে

বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতের

আসন পুনর্বিন্যাসে পাল্টে যায় ভোটের হিসাব বিএনপির মনোনয়ন চান একদল নেতা জামায়াতসহ চার দলের প্রার্থী ঘোষণা

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে জিততে বিএনপির অন্তত নয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে সক্রিয়। আসনটিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীও।

১৯৭৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শুধু কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-৩ আসন। ওই সময়ে আটবারের নির্বাচনে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৩ (কটিয়াদী) আসন থেকে চারবারই বিএনপি প্রার্থী জয় পান। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে বিএনপির আনিসুজ্জামান খোকন, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন জয় পান। এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান দয়াল জয়ী হয়েছিলেন। এজন্য এই কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনকে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

‘দলীয় প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই বিবেচনায় আমি বিশ্বাস করি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী ভিড়

এ আসনে বিএনপির অন্তত নয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে সক্রিয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দীন, জেলা সহ-সভাপতি আশফাক আহমেদ জুন, সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আখিল, সুইডেন প্রবাসী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি কামাল উদ্দিন, সাবেক উপজেলা যুবদল সভাপতি আহমদ ফারুক খোকন, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার আল আশরাফ মামুন, কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ এবং বিএনপি নেতা রেজাউল করিম।

‘এ আসন থেকে জামায়াত কখনো সংসদ সদস্য হয়নি। এবার জনগণের সমর্থনে আমরা ইতিহাস গড়তে চাই।’

জামায়াতসহ অন্যান্য প্রার্থী

জামায়াতে ইসলামী এরইমধ্যে এই আসনে কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়লকে একক প্রার্থী করেছে। এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ও জেলা সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম শফীক, খেলাফত মজলিশের মাওলানা ছাঈদ আহমদ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মাওলানা রশীদ আহমদ জাহাঙ্গীর হোসাইনীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এছাড়া সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন (বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা) আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

আরও পড়ুনজামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়ি সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ ২০ অক্টোবর বিএনপির মনোনয়ন চান চার নেতা, একক প্রার্থীতে উজ্জীবিত জামায়াত 

অতীতের ফলাফল

কিশোরগঞ্জ-২ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোরঞ্জন ধর, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আনিসুজ্জামান খোকন, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মুক্তিযোদ্ধা বজলুল করিম ফালু, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, ২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ডা. আবদুল মান্নান, ২০১৪ সালে বিনা ভোটে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নূর মোহাম্মদ ও ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান দয়াল জয়ী হয়েছিলেন।

‘দেশে দুই দলের পালাবদলের রাজনীতি মানুষকে শুধু হতাশ করেছে। জনগণ এখন বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজছে। আমরা গণঅধিকার পরিষদ মাঠে নেমেছি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।’

ভোটার সংখ্যা ও কেন্দ্র

জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৪, নারী ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৫ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫ জন।

প্রার্থীদের বক্তব্য

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দীন বলেন, হাসিনার আমলে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে গেছি, হামলা-মামলা সহ্য করেছি। আশা করি ত্যাগের মূল্যায়ন করবে দল।

সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আখিল বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে মাঠে থেকেছি। আমার বিশ্বাস এবার দল আমাকে অগ্রাধিকার দেবে।’

আহমেদ ফারুক খোকন বলেন, ‘দলীয় প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই বিবেচনায় আমি বিশ্বাস করি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল বলেন, ‘এ আসন থেকে জামায়াত কখনো সংসদ সদস্য হয়নি। এবার জনগণের সমর্থনে আমরা ইতিহাস গড়তে চাই। সাংগঠনিক কাজ ও গণসংযোগ বাড়ানো হয়েছে।’

গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম শফীক বলেন, দেশে দুই দলের পালাবদলের রাজনীতি মানুষকে শুধু হতাশ করেছে। জনগণ এখন বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজছে। আমরা গণঅধিকার পরিষদ মাঠে নেমেছি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কালো টাকা আর সন্ত্রাসের রাজনীতিকে পেছনে ফেলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যদি জনগণ ভোট দিতে পারে, তাহলে আমরাই হবো মানুষের ভরসার জায়গা।

এফএ/এমএমএআর/জিকেএস