জাতীয়

পতেঙ্গা সৈকতের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেছেন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত চট্টগ্রামের অমূল্য সম্পদ। বারবার সতর্ক করার পরও যারা সৈকত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে সৈকত এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর মেয়র এ কথা বলেন। তিনি জানান, পতেঙ্গা দেশের ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ। তাই সৈকতকে সুশৃঙ্খল ও সুন্দর রাখা সবার দায়িত্ব।

মেয়র বলেন, ‘যেখানে মানুষ একটু সময় কাটাতে আসে, সেখানে কেউ বিচের ওয়াকওয়ে বা জনসাধারণের পথ দখল করে টেবিল-ছাতা রেখে ব্যবসা বসাতে পারবেন না। পর্যটকদের জোর করে খাবার খাওয়ানো বা বিল চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগও আমরা পেয়েছি। এখানকার ব্যবসা যদি সৈকতকে সংস্কৃতিগত বা ভৌগোলিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

শাহাদাত হোসেন জানান, সৈকতের পেছনের অংশে দোকানপাট আছে এবং সেখানে পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ রয়েছে। তাই সৈকত অঞ্চলে হোটেল বা স্থায়ী বসতি গড়ে তুলে জনস্বার্থ বিপন্ন করা গ্রহণযোগ্য নয়।

মেয়র বলেন, ‘আমি বারবার দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সম্মতিও জানিয়েছেন যে বিচ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তারপর আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু এরপরও যারা বিচ দখল করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), টুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’

আরও পড়ুনসবাই মিলে পরিচ্ছন্ন-সবুজ নগর গড়ার আহ্বান মেয়র শাহাদাতেরপটিয়ায় জামায়াতের ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পে ৯০০ রোগীর সেবামিরসরাইয়ে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে বাজিমাত

উচ্ছেদ অভিযানের আগে মেয়র একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকদূষণ মোকাবিলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

এসময় মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘প্লাস্টিকদূষণ সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এমন একটি দায়িত্বশীল সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই, যেখানে প্রত্যেক দর্শনার্থী ও নাগরিক নিজেদের সৈকত পরিচ্ছন্ন এবং সাগর সুস্থ রাখার দায়িত্ব নেবে।’

অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি সরদার এম আসাদুজ্জামান পতেঙ্গার পরিবেশগত গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, পতেঙ্গা শুধু একটি সৈকত নয়, এটি চট্টগ্রামের গর্বের প্রতীক। কিন্তু প্রতিদিন এখানে জমা হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক প্রাণী, জনস্বাস্থ্য এবং জীবিকার জন্য হুমকি তৈরি করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে চট্টগ্রাম শহরে দৈনিক প্রায় তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর একটি বড় অংশ কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে, যা জীববৈচিত্র্য এবং উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।

দিনব্যাপী এ কর্মসূচিতে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা সৈকত পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা, পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিন ও সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন এবং আগত দর্শনার্থীদের প্লাস্টিক ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। সচেতনতামূলক বার্তাগুলোতে তুলে ধরা হয় প্লাস্টিক বর্জ্যের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব এবং দায়িত্বশীল ভোক্তা আচরণের গুরুত্ব।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় সংগঠনের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দেখিয়ে দেয় যে ছোট ছোট উদ্যোগ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

এ কর্মসূচি ইউএনডিপি বাংলাদেশের ‘প্লাস্টিক সার্কুলারিটি প্রজেক্ট’-এর অংশ, যা দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টাঙ্গাইল জেলায় ১৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পুনরুদ্ধার ও দায়িত্বশীলভাবে ব্যবস্থাপনা করা। যাতে প্লাস্টিক দূষণ থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্পদে রূপান্তরিত হয়।

এমআরএএইচ/একিউএফ/এএসএম