তীব্র খরায় বিপর্যস্ত ইরান। রাজধানী তেহরানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আগামী দুই সপ্তাহ পর শহরটিতে পান করার মতো সুপেয় পানি আর অবশিষ্ট থাকবে না। দেশটির পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
রোববার (২ নভেম্বর) ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ নিউজ এজেন্সি জানায়, রাজধানীর পাঁচটি প্রধান বাঁধেই পানি ভয়াবহভাবে কমে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমির কবির বাঁধে এখন রয়েছে মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ কিউবিক মিটার পানি, যা এর ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ।
তেহরান পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক বেহজাদ পারসা জানিয়েছেন, এই পানি দিয়ে শহরে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের মতো পানযোগ্য পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
অন্য চারটি বাঁধের পানির অবস্থা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লার, লাতিয়ান ও মামলু বাঁধে ধারণক্ষমতার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পানি অবশিষ্ট আছে। আর তালেকান বাঁধেও পানি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে।
তেহরানে এমন ভয়াবহ খরা কয়েক দশকে দেখা যায়নি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে এক স্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে গত প্রায় ১০০ বছরে ইরানে এত কম বৃষ্টিপাতের নজির নেই।
আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত ১ কোটিরও বেশি মানুষের শহর তেহরানের পানির মূল উৎসই এই পর্বতাঞ্চল থেকে নেমে আসা নদী ও জলাধার। পারসা জানান, এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ছিল ৮ কোটি ৬০ লাখ কিউবিক মিটার পানি। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে বৃষ্টিপাত ‘১০০ শতাংশ কমে যাওয়ায়’ পানি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
ইরানের সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, প্রতিদিন তেহরানের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৩০ লাখ কিউবিক মিটার পানি। কিন্তু পানি সংরক্ষণের প্রয়াসে এরই মধ্যে শহরের বহু অঞ্চলে পানি সরবরাহ বারবার বন্ধ রাখতে হচ্ছে। গ্রীষ্মকালজুড়েই এমন বন্ধ রাখার ঘটনা ছিল নিয়মিত।
পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গত জুলাই-আগস্টে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। সে সময় তেহরানে তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তা পৌঁছেছিল ৫০ ডিগ্রিতেও বেশি। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যেও লোডশেডিং ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সে সময় সতর্ক করে বলেছিলেন, এখন যতটা বলা হচ্ছে, পানির সংকট এর চেয়েও ভয়াবহ।
দেশটিতে পানির ঘাটতির মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে খারাপ ব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত পানি ব্যবহারকে। সঙ্গে আছে জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, যা খরাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
ইরানের প্রতিবেশি ইরাকেও একই চিত্র দেখা গেছে। ১৯৯৩ সালের পর এবারই দেশটিতে সবচেয়ে বৃষ্টিহীন বছর কাটছে। বৃষ্টি না হওয়া ও নদীর ওপরের বাঁধগুলোর কারণে তিগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর জলস্তর ২৭ শতাংশ কমে গেছে, ফলে দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ ভুগছে তীব্র পানিসংকটে।
সূত্র: আইআরএনএ, আল-জাজিরা
এসএএইচ