আল্লাহর রাসুলের (সা.) সাহাবিদের অনেকে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে যেমন পুরুষ সাহাবিরা ছিলেন, নারী সাহাবিরাও ছিলেন। এখানে আমরা দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ৮ নারী সাহাবির কথা বলেছি।
নবীজির (সা.) প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা.) ছিলেন নবীজির ওপর ঈমান আনা প্রথম মানুষ; নারী-পুরুষ সবার মধ্যে প্রথম। নবীজির ওপর ইমান ও নবীজিকে সমর্থন-সহযোগিতার কারণে তিনি আল্লাহর কাছেও মর্যাদা লাভ করেন। বিভিন্ন হাদিসে তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মুমিন নারীদের একজন বলা হয়েছে। জীবনকালেই তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম ও জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একদিন হজরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই যে খাদিজা আপনার কাছে আসছেন, তার সাথে একটি পাত্র রয়েছে, যাতে তরকারি আছে বা (বর্ণনাকারী বলেন) খাবার অথবা পানীয়। তিনি আপনার কাছে এসে পৌঁছলে তাকে তার রবের পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাকে জান্নাতে একটি বাঁশের ঘরের সুসংবাদ দেবেন, যেখানে কোনো কোলাহল বা কষ্ট থাকবে না। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
২. সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রা.)সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রা.) ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। বলা হয় তিনি ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী সপ্তম ব্যক্তি। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, প্রথম প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণকারী সাত ব্যক্তি হলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.), আবু বকর, বিলাল, খাব্বাব, সুহাইব, আম্মার এবং তার মা সুমাইয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)।
মক্কায় সুমাইয়ার (রা.) পরিবার ছিল বনু মাখজুমের আশ্রিত। যখন সুমাইয়া (রা.), তার স্বামী ইয়াসির, তাদের ছেলে আম্মার এবং ভাই আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন আবু জাহল ও তার গোত্র বানু মাখজুমের মুশরিকরা তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তাকে শহীদ করে দেয়। তিনি ইসলামের প্রথম শহীদ।
তিনি দুনিয়াতেই জান্নাতের সুংসবাদ পেয়েছিলেন। ইবনে হিশাম ইবনে ইসহাকের সূত্রে লিখেছেন, বনু মাখজুম আম্মার ইবনে ইয়াসির ও তার বাবা-মাকে রৌদ্রতপ্ত দুপুরে বের করে আনত এবং মক্কার উত্তপ্ত বালুতে ফেলে রাখতো। একদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের করুণ অবস্থা দেখে বলেছিলেন, ধৈর্য ধরো, হে ইয়াসিরের পরিবার! তোমাদের প্রতিশ্রুত ঠিকানা হলো জান্নাত! (সীরাতে ইবনে হিশাম) (তাবরানি ফিল কাবির)
৩. আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা.)আল্লাহর রাসুলের (সা.) প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশা (রা.) দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেন, জিবরাইল (আ.) একদিন একটি সবুজ রঙের রেশমি কাপড়ে তার (আয়েশার) প্রতিচ্ছবি নবীজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখিয়ে বলেন, ইনি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার স্ত্রী। (সহিহ বুখারি)
৪. হাফসা বিনতে ওমর (রা.)রাসুলের (সা.) স্ত্রী ওমরের (রা.) মেয়ে হাফসা (রা.) দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার হাফসাকে (রা.) তালাক দিয়েছিলেন। তখন জিবরাইল (আ.) এসে বলেন, হাফসা প্রচুর রোজা রাখেন ও নামাজ আদায় করেন, তিনি আপনার জান্নাতের স্ত্রী, তাকে ফিরিয়ে নিন। (মুস্তাদরাক হাকেম)
নবীজির (সা.) মেয়ে ফাতেমা (রা.) দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। হোজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একজন ফেরেশতা যিনি আগে কখনো পৃথিবীতে আসেননি, তিনি আমাকে সালাম দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, ফাতেমা জান্নাতের নারীদের নেতা, আর হাসান ও হোসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা। (সুনানে তিরমিজি)
৬. উম্মে জাফর (রা.)উম্মে জাফর (রা.) ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ একজন নারী সাহাবি। তিনি মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলেন। একবার তিনি নবীজির (সা.) কাছে গিয়ে এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া চাইলেন। নবীজি (সা.) বললেন, আপনি চাইলে ধৈর্য ধরুন এবং আপনি জান্নাত লাভ করবেন। আর আপনি চাইলে আমি দোয়া করি। উম্মে জাফর (রা.) বললেন, আমি ধৈর্য ধরব। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
৭. উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রা.)নবীজির (সা.) নারী সাহাবি উম্মে হারাম বিনতে মিলহানকে (রা.) নবীজি (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে বলেছিলেন, তিনি সমুদ্রযুদ্ধে অংশ নেবেন। পরবর্তীতে তিনি মুয়াবিয়ার (রা.) খেলাফতকালে সমুদ্রযুদ্ধে অংশ নেন এবং সেখানেই শহীদ হন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
৮. উম্মে সুলায়েম গুমাইসা বিনতে মিলহান (রা.)উম্মে সুলায়েম গুমাইসা বিনতে মিলহান (রা.) প্রখ্যাত সাহাবি আনাস ইবনে মালিকের (রা.) মা। তিনিই বালকবয়সী আনাসকে (রা.) নবীজির (সা.) খেদমতের জন্য নিয়ে এসে বলেছিলেন, মদিনার সবাই আপনার জন্য উপহার এনেছে, আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এসেছি, সে আপনার সেবা করবে।
তিনিও দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, সেখানে আমি কারও চলার আওয়াজ পেলাম। আমি প্রশ্ন করলাম, কে? লোকেরা বলল, তিনি আনাস ইবনে মালিকের মা গুমাইসা বিনতে মিলহান। (সহিহ মুসলিম)
ওএফএফ/জেআইএম