আন্তর্জাতিক

ছোট্ট মেয়ের মিষ্টি ব্যবহারে থামলো ‘ডাকাতি’, ভাইরাল ভিডিওটি সাজানো

ছোট্ট মেয়ের মিষ্টি ব্যবহারে থেমে গেলো ‘ডাকাতি’। শিশুটির নিষ্পাপ আচরণে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি ‘সশস্ত্র ডাকাত’। লুটে নেওয়া টাকা-পয়সা ফেরত দিয়ে উল্টো মেয়েটির মাথায় চুমু খেয়ে বিদায় নেয় সে। সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানে। তবে এটি আসল কোনো ডাকাতি নয়। 

ফ্যাক্ট চেক যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং, ‘কামরান টিম’ নামের এক পাকিস্তানি কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সাজানো ভিডিও।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দোকানদার কাউন্টারের পেছনে বসে রয়েছেন। পাশে তার চার বা পাঁচ বছর বয়সী ছোট্ট কন্যা। এমন সময় এক সশস্ত্র ব্যক্তি দোকানে ঢুকে বন্দুক তাক করে নগদ টাকা ও দোকানদারের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

আরও পড়ুন>>পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে কেনাকাটা করতে গিয়ে স্ত্রীর কাছে হাতেনাতে ধরা, ভিডিও ভাইরালগয়নার দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে ২৫ সেকেন্ডে ২০টি থাপ্পড় খেলেন নারীসোনার দোকানে অভিনব চুরি/ আসল আংটি সরিয়ে নকল রাখলেন নারী, ধরা সিসি ক্যামেরায়

ঠিক সেই মুহূর্তে পরিস্থিতি না বুঝে ছোট্ট শিশুটি ‘ডাকাতের’ দিকে তার হাতে থাকা ললিপপ বাড়িয়ে দেয়।

In #Pakistan, a robber experienced an unexpected change of heart and returned his stolen goods after being charmed by a simple candy offered by the shopkeeper's young daughter. pic.twitter.com/otSB71QxFO

— Tehran Times (@TehranTimes79) November 17, 2025

অপ্রত্যাশিত এই নিষ্পাপ আচরণে ‘ডাকাতের’ আচরণ মুহূর্তেই বদলে যায়। তাকে দেখা যায় দোকানদারের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া টাকা ও ফোন ফিরিয়ে দিচ্ছে। এমনকি শিশুটির প্রতি স্নেহ দেখিয়ে মাথায় চুমুও খায় লোকটি। এরপর কারও কোনো ক্ষতি না করেই দোকান ছেড়ে চলে যায় সে।

এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বহু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, এক শিশুর নিষ্পাপ হৃদয় কখনো কখনো অন্ধকারতম মনকেও আলো দেখাতে পারে।

রিউমর স্ক্যানার তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Kamran Team Official’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘ডাকাতের মন নরম হয়ে গেল’ শীর্ষক শিরোনামে গত ১৬ নভেম্বরে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়।

ভিডিওর বর্ণনা অংশে বলা হয়, ‘এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ সাজানো (স্টেজড) এবং এতে দেখা যাওয়া ব্যক্তিরা আসলে নাটকের চরিত্র (অভিনেতা)। ভিডিওতে দেখানো অস্ত্রগুলোও নকল। এই ভিডিওর উদ্দেশ্য কারো অনুভূতিতে আঘাত করা নয়। এই ভিডিও কোনো ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে না। ভিডিওটি শুধু বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ধন্যবাদ।’ (অনূদিত)

উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়াও, আলোচিত ভিডিওটি ‘কামরান টিম’ নামের ফেসবুক পেজ থেকেও গত ১৬ নভেম্বরে প্রচার হতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনেও ভিডিওটি আসল নয় বরং অভিনয় ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাছাড়া, উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যবেক্ষণ করলে একইরকম কাহিনীর আরো অনেকগুলো ভিডিও পাওয়া যায়। সেসব ভিডিওর বর্ণনা অংশেও ভিডিওগুলো আসল নয় বরং অভিনয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, আলোচিত ভিডিওতে প্রদর্শিত ব্যক্তিদের সেসব নানা ভিডিওতেও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, ‘কামরান টিম’ নামের এক পাকিস্তানি কনটেন্ট ক্রিয়েটরের স্ক্রিপ্টেড ভিডিওকে শিশুর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে ডাকাতের ডাকাতি বাদ দিয়ে জিনিসপত্র ফেরত দেওয়ার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

কেএএ/এমএমএআর