জাতীয়

ভূমিকম্প আতঙ্কে দৈনন্দিন কাজ বাদ দিলে বাড়তে পারে মানসিক চাপ

ভূমিকম্পের মতো অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের পর আতঙ্ক, ভয় কিংবা কান্নায় ভেঙে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন মনোচিকিৎসক ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, আতঙ্কের সময় দৈনন্দিন কাজ থামিয়ে দিলে মানসিক চাপ আরও বাড়তে পারে।

দুইদিনের ব্যবধানে ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনটির উৎপত্তিস্থলই ছিল নরসিংদী এবং একটির ঢাকা।

ভূমিকম্পে মানসিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে জাগো নিউজকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের পর মানুষের ভয় পাওয়া, আতঙ্কিত হওয়া, কান্না করা বা অসুরক্ষিত অনুভব করা খুব স্বাভাবিক। এটি মানসিক দুর্বলতার প্রকাশ নয়। এমন পরিস্থিতিতে প্যানিক হওয়ার সঙ্গে দুর্বলতার কোনো সম্পর্ক নেই, এটি একটি স্বাভাবিক মানবিক প্রতিক্রিয়া।’

‘ভূমিকম্পের পর কারও মধ্যে প্যানিক তৈরি হলে বা তিনি কান্না করলে, তাকে দুর্বল বলা যাবে না এবং এ নিয়ে ঠাট্টা-তামাশাও করা উচিত নয়।’

আরও পড়ুনভূমিকম্পে প্রাণ গেলো ১০ জনেরঢামেকের জরুরি বিভাগে ৬৩ রোগী, আইসিইউতে ১ জনের মৃত্যুভূমিকম্প আতঙ্কে হল থেকে লাফ, ঢাবিতে ২১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহতনিচে নেমেও হলো না শেষ রক্ষা, রেলিং ধসে নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু

ডা. হেলাল জানান, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ঝড়-বন্যা-অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় বেশি অভ্যস্ত হলেও ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত। ফলে যে আতঙ্ক তৈরি হয়, তা তুলনামূলকভাবে বেশি। ভূমিকম্প মোকাবিলায় সমাধান দুই ধরনের, প্রোঅ্যাকটিভ ও রিঅ্যাকটিভ।

রিঅ্যাকটিভ প্রসঙ্গে ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, আতঙ্কের সময় দৈনন্দিন কাজ থামিয়ে দিলে মানসিক চাপ আরও বাড়তে পারে। তাই স্বাভাবিক রুটিন বজায় রাখা, বিনোদনমূলক কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এবং কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলা মনকে দ্রুত স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ যত একা থাকবে, প্যানিক তত বাড়বে।’

আরও পড়ুনকুমিল্লায় ইপিজেডে ভূমিকম্পের সময় প্যানিক অ্যাটাকে অজ্ঞান ৮০ নারীমাগুরায় কারখানা থেকে নামতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে দেড় শতাধিক শ্রমিক আহতগাজীপুরে পোশাক কারখানা থেকে নামতে গিয়ে তিন শতাধিক শ্রমিক আহতভূমিকম্প আতঙ্কে পড়ছে না শিক্ষার্থীরা, পরীক্ষা স্থগিতের দাবি

‘প্রোঅ্যাকটিভ অংশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জ্ঞান’ উল্লেখ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘শুক্রবারের ভূমিকম্পে যত মানুষ আঘাত পেয়েছে, তার পাঁচগুণ মানুষ আহত হয়েছে পদদলিত ও লাফিয়ে পড়ার কারণে—এটা আমাদের জ্ঞানের ঘাটতি।’

‘ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত, সিঁড়িতে দাঁড়াবো, খাটের নিচে আশ্রয় নেবো, ছাদে উঠবো নাকি নিরাপদ স্থানে থাকবো—এসব বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি।’

ডা. হেলাল বলেন, ভূমিকম্পে ভয় পাওয়া ‘স্বাস্থ্যকর’ প্রতিক্রিয়া। এটি দুর্বলতা নয়, বরং স্বাভাবিক ও মানবিক।

আরও পড়ুননরসিংদীতে ভূমিকম্পের পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষদুইদিনে চারবার, সামনে আরও বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদেরউচ্চমাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ভবনগুলো তীব্র ঝুঁকিতেনরসিংদীজুড়ে ভূমিকম্পের চিহ্ন, ফেটে ৭-৮ ইঞ্চি ফাঁকা হয়ে গেছে মাটি

শিশুদের ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ সবচেয়ে জরুরি উল্লেখ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, বড়দের আচরণ পরিবর্তন কঠিন হলেও শিশুদের আচরণ পরিবর্তন সহজ।

তিনি সতর্ক করেন, ভূমিকম্প নিয়ে অযথা ভয় দেখানো, আতঙ্ক ছড়ানো বা উদ্বেগ প্রকাশ করা শিশুদের আরও আতঙ্কিত করে।

জেপিআই/এমএমএআর/এমএস