দেশজুড়ে

মাতৃস্নেহে বেড়ে উঠছে মা-হারা হাতি শাবক যমুনা

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের টেকনাফের পাহাড়ের পাদদেশে গত বছরের শুরুর দিকে একটি শাবক জন্ম দেয় মাদি বন্যহাতি। এসময় মা-শাবককে ঘিরে ছিলো হাতির পাল। দু’তিনদিন পর পুরো হাতির পাল সেখান থেকে সরে যায়। এর মাস দুয়েক পর হঠাৎ মরদেহ মেলে একটি মাদি হাতির। তারই কিছুদিন পর লোকালয়ে আসে একটি হাতি শাবক। সঙ্গে অন্য কোনো বড় হাতি খুঁজে না পেয়ে অপেক্ষা করা হয় দু’দিন। এ দু’দিনেও বড় কোনো হাতির পাল হাতি শাবককে খুঁজতে আসেনি আর।

এলিফেন্ট রেসকিউ টিমের সহযোগিতায় বনবিভাগ হাতি শাবকটি উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হস্তান্তর করে। সেই থেকে মানব স্নেহে দিন দিন বড় হচ্ছে হাতি শাবক ‘যমুনা’। এমনটিই জানালেন ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক (রেঞ্জ কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম।

বন কর্মকর্তা মাজহারের মতে, ২০২১ সালে ১০ মার্চ তিন মাস বয়সী হাতি শাবকটি পার্কের অতিথি হয়ে আসে। তার নাম দেওয়া হয় ‘যমুনা’। ওই সময় ৩ ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার যমুনার ওজন ছিলো ১২১ কেজি। মা-হীন শাবকটিকে মা-বাবার স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে পরিচর্যা করছেন বনকর্মী বীরসেন চাকমা।

তিনি বলেন, প্রতিদিন ৮ প্যাকেট ল্যাকটোজেন-২ লেবেলের শিশুখাদ্য, ৫ ডজন কলা, দুধের সঙ্গে দু’বেলা দধিসহ চার্টমতো অন্য খাবার নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। পার্কে তার সময় কেটেছে ১১ মাস। ১ ফেব্রুয়ারির পরিমাপ মতে তার চলমান ওজন ৪০১ কেজি।

পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, বন্যপ্রাণি ও মানব সম্পূর্ণ আলাদা স্বভাবের। কিন্তু মানবের পরিচর্যায় প্রাণিকূলও ভালোবাসার জালে আবদ্ধ হয়ে যায় সেটা হাতি শাবক যমুনাকে না দেখলে বোঝা যাবে না। পার্কের বড় হাতি আর এ শাবকের মাঝে তফাত অনেক। বড় হাতিগুলো প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়ার পর পোষ মানিয়ে পার্কে আনা হয়েছে। কিন্তু যমুনাকে সম্পূর্ণ মা-বাবার আদর, স্নেহ-ভালোবাসায় বড় করতে হচ্ছে। দিনের বেলা প্রকৃতির মাঝে আর রাতে আইশোলেসন কক্ষে রাখা হয় যমুনাকে।

তিনি বলেন, আবদ্ধ জঙ্গলে থাকাকালীন তার পরিচর্যাকারী বীরসেনকে না দেখলে অবিকল বাচ্চাদের মতোই আচরণ করে শাবকটি। এক ধরনের ডাক, পায়চারি, দরজায় ধাক্কা দিয়ে চঞ্চলতা প্রকাশ করে সে। বীরসেন কাছে গেলেই শুঁড় দিয়ে আদর করে একদম শান্ত হয়ে যায় যমুনা। এ সময় বিশেষ ধরনের ব্রাশ দিয়ে শরীর আঁচড়ে দিলে শুয়ে যায়। মানব ও প্রাণির বাচ্চার এ খুঁনশুটি মনে প্রশান্তি এনে দেয়।

যমুনার পরিচর্যাকারী বীরসেন চাকমা বলেন, প্রাণী হলেও যমুনা আমারই সন্তান। বাড়িতে আমার সন্তানদের প্রতি যে আদর-স্নেহ, ঠিক ততটুকু বরাদ্দ এখন যমুনার প্রতিও। দায়িত্বের খাতিরে পরিচর্যা করতে গিয়ে একটি অজানা ভালোবাসায় আটকে গেছি। যমুনাকে না দেখলে, তাকে নিয়ে না খেললে দিনে আমার অতৃপ্তি থেকে যায়। এখনো শাবকটি ভালোই আছে। এভাবে যেন তাকে পরিপূর্ণ বড় করতে পারি সেই দোয়া চাই।

এফএ/জিকেএস