চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা। বাড়তি খরচে দূরে গিয়ে জাগ দিচ্ছেন। আবার অনেকে বৃষ্টির অপেক্ষায় পাট কেটে ক্ষেতেই রেখে দিয়েছেন। এতে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের দাবি, সঠিক সময়ে পাট জাগ দিতে না পারলে লোকসানে পড়বেন তারা।
চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমিতে কৃষকরা পাট চাষ করেছেন। যা গত বছরের চেয়ে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমি থেকে পাট উৎপাদন হবে ৬৪ হাজার ৬৭৫ টন। তবে পাট চাষ বাড়লেও নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা।
কেউ কেউ স্যালোমেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে তা জলাশয়ে জমা করে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে খরচ বেশি হওয়ায় লাভের অঙ্ক কমছে। এরপরও পাট চাষে খুশি কৃষকরা। এ বছর বিঘা প্রতি পাটচাষে চাষিদের খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকা। আর প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিঘা প্রতি পাটের ফলনও হচ্ছে ১০ মণ বা এরও বেশি। খরচ বাদ দিয়ে পাট চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের পাট চাষি আবিদ হোসেন বলেন, ‘এক একর জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট কেটে জাগ দিতে পারছি না। একটা পুকুর ভাড়া নিয়েছি। মেশিনে সেচ দিয়ে পানি দিতে হবে। যা অনেক ব্যয়বহুল।’
একই গ্রামের পাট চাষি মো. জহুরুল হক বলেন, ‘এ বছর পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। বাড়ির পাশে কাদাপানিতে কোনোরকম চুবিয়ে রেখেছি পাট। এখন বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।’
সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের পাট চাষি আব্দুস সালাম বলেন, ‘পাঁচবিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বিঘাপ্রতি গড়ে ১৩ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। খালে, বিল ও জলাশয়ে পানি না থাকার কারণে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরে স্যালোমেশিন দিয়ে বাড়ির পাশের খাদে পানি দিয়ে সেখানে পাট জাগ দিয়েছি।’
ওই গ্রামের পাট চাষি লাবু বলেন, ‘পাটের ফলন ভালো হলেও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। পরে মেশিনে পানি দিয়ে জাগ দিয়েছি। তবে এ বছর পাটের দাম অনেক ভালো। বিঘা প্রতি গড়ে ৯-১০ মণ হারে পাট হচ্ছে। ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করছি।’
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জাগো নিউজকে বলেন, চাষিরা জমির পাট কাটতে শুরু করেছেন। এখন বড় সমস্যা পাট পচানো নিয়ে। পানির অভাবে চাষিরা ভালোভাবে পাট পচাতে পারছেন না। আমরা চাষিদের কম ব্যয়ে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে আঁশের মান ভালো হয়। ভালো মানের পাট উৎপাদন করতে পারলে দামও ভালো পাওয়া যাবে। এতে তারা লাভবান হবেন।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পাটের আবাদ ভালো হয়েছে এবং পাটের অবস্থাও ভালো। অনাবৃষ্টি হলেও পাটের উৎপাদন ব্যাহত হবে না। তবে অতিবৃষ্টি হলে চাষিদের জন্য আরও সুবিধা হতো।
সালাউদ্দীন কাজল/এসজে/এমএস