দেশজুড়ে

ডাকাত সন্দেহে প্রতিবন্ধীকে গণধোলাই

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে মো. আতিকুর রহমার (৩০) নামে এক প্রতিবন্ধী যুবককে গণধোলাই দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের আড়াবান্দাখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী আতিক নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে।এলাকাবাসী জানায়, গত সাত মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২০/২২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আর এ কারণে উপজেলার সর্বত্র সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে কোনো মানুষ দেখলেই ডাকাত বলে সন্দেহ হয়। আর সেই সন্দেহের রোষানলে পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে প্রতিবন্ধী আতিক। বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের কেবিনে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন যুবক আতিকুর রহমার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান আতিক হাসপাতালের বেডে কাতরালেও সুচিকিৎসা করার সামর্থ নেই। কালীগঞ্জে এভাবে একের পর এক ডাকাতি হতে থাকলে উপজেলাবাসীর মনে যে ডাকাত আতঙ্ক কাজ করছে তাতে আরো যে কোনো ধরনের বড় বিপদ ঘটতে পারে। তাই অনতিবিলম্বে থানা পুলিশের আরো আন্তরিকতা কামনা করেন স্থানীয়রা।   আতিকের মা মিনারা বেগম জানান, তিন মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে আতিক সবার ছোট এবং বুদ্ধি -প্রতিবন্ধী। স্বামী কফিল উদ্দিনও বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী কোনো কিছুই করতে পারেনা। তিনি নিজেই রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন। ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেনা। তাই বেশির ভাগ সময় পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। ওই দিন একটু ভালো দেখে তার পায়ের শিকল খুলে দেয়।আতিকের চাচাত ভাই নুরুজ্জামান জানান, নদী সাঁতরিয়ে কালীগঞ্জে গিয়ে ওই দিন রাতে উপজেলার আড়াবান্দাখোলা গ্রামের মৃত পাগালি রায়ের ছেলে করুণা রায়ের বাড়িতে পানি চাইতে গেলে ওই বাড়ির মহিলারা ডাকাত বলে চিৎকার-চেচামেচি করে। পরে এলাকার লোকজন তাকে ডাকাত মনে করে অমানবিকভাবে মারধর করে পুলিশে খবর দেয়। পরে উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল ইসলাম তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে সে হাসপাতালের বেডে সু-চিকিৎসার অভাবে ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আতিকের নামে ওই বাড়িওয়ালা বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়। পরে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যানের হস্থক্ষেপে তা বন্ধ করা হয়।  ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল হোসেন জানান, আতিক একজন প্রতিবন্ধী এবং দরিদ্র যুবক। আমি নিজে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। তবে ওর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সত্যি খুব অমানবিক।    কালীগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, আতিকের মায়ের আবেদন এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের হস্তক্ষেপে তাকে পরিবারের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।  আব্দুর রহমান আরমান/এআরএ/আরআইপি