থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যস্ত শহর এটি। এখানে রয়েছে বিএমডব্লিউসহ নামিদামি বিশ্ব ব্র্যান্ডের অফিসও। ফ্লাইওভার, স্কাই ট্রেন আর রংবেরংয়ের ট্যাক্সির শহর বললেও ভুল হবে না। ব্যস্ততম এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ উপশহরের নাম সুকুম্ভিত। ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটারের দূরত্ব। ট্যাক্সিতে যেতে সময় লাগে ৪০ মিনিট। ভাড়া ৪০০ বাথের মতো (বাংলাদেশি প্রায় ৯০০ টাকা)। ব্যাংককে রোড কিংবা গলিকে ‘সয়’ নামে সম্বোধন করা হয়। যেমন ১ নম্বর রোডকে বলা হয় সয়-ওয়ান, দুই নম্বরকে সয়-টু। এরকম মোট ৬৩টি রোড নিয়ে গড়ে উঠেছে ব্যাংককের সুকুম্ভিত উপশহরটি।সুকুম্ভিতের প্রতিটি রাস্তাই কোনো না কোনো কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কোনোটিতে রয়েছে হাসপাতাল, কোনোটি রেস্টুরেন্টের জন্য, কোনোটি হোটেলের জন্য, স্ট্রিট ফুডের জন্য, কোনোটি আবার বার অথবা নাইট ক্লাবের জন্য। তেমনি একটি বিখ্যাত সড়কের নাম সয়-থ্রি। এই সড়কটিতেই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও স্বনামধন্য বামরুনগ্রাড হাসপাতাল অবস্থিত।বাংলাদেশের ভিআইপি, ভিভিআইপিদের অনেকেই এখানে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে আসেন। অনন্ত জলিল, তামিম ইকবালদের মতো তারকাদের সন্তান প্রথমবারের মতো পৃথিবীর আলো দেখে এই হাসপাতালটিতেই। বাংলাদেশ, ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নাগরিকেরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। তবে তাদের মধ্যে আরবদের সংখ্যাই বেশি। সুকুম্ভিতের সয়-থ্রি সড়কটিতে সৌদি মালিকানাধীন দুটি পাঁচ তারকা সমমানের হোটেল রয়েছে। এদের একটি হচ্ছে ‘দ্যা গ্রেস হোটেল’ অপরটি ‘জেনিথ হোটেল’। হোটেল দুটিকে ঘিরে এখানে প্রায় সব আরবদের আনাগোনা। আর তাই সড়কটির নাম হয়ে গেছে আরব স্ট্রিট। কবে, কীভাবে জানা না থাকলেও ট্যাক্সি চালক থেকে শুরু করে সবাই এই সড়কটিকে ‘আরব স্ট্রিট’ নামেই চেনে। আরব স্ট্রিট নামকরণের সঙ্গে সড়কটিরও অনেক মিল রয়েছে। সড়কের পাশে শ’খানেক মানি এক্সচেঞ্জ, ফলের দোকান, ট্যুর অপারেটর, ব্যাগ, আতর, জুস বার রয়েছে। এদের অধিকাংশই আরবরা পরিচালনা করছে। দোকানিদের পরিচয় জানা গেলেও তাদের সাজশয্যায় রয়েছে আরবিদের ছাপ। মেয়েদের পরনে বোরকা-হিজাব। তবে ছেলেদের পোশাকে রয়েছে ভিন্নতা। বিশ্বে যৌনকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত কয়েকটি শহরের মধ্যে ব্যাংকক একটি। পুরো ব্যাংকক জুড়েই থাইসহ নানা দেশি যৌনকর্মীদের দেখা যায় সড়কের দু’ধারে। তবে সুকুম্ভিতের ‘আরব স্ট্রিটে’ পতিতারাও আরবীয়। অন্যান্য পেশাজীবী আরব মহিলাদের মতো তারাও বোরকা হিজাব পরে আরব স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে থাকে। তাছাড়া আরব স্ট্রিটের ছাপ রয়েছে এখানকার খাবারের দোকানগুলোতেও। ব্যাংককের অন্যান্য শহরগুলোতে ওয়েস্টার্ন খাবার আর ফাস্টফুড থাকলেও এখানে ভিন্ন। আরব স্ট্রিটের দোকানগুলোতে মূলত কাবাব, পরটা, শরমা, ভাত, রুটি, বিরিয়ানি বিক্রি করা হয়। সুকুম্ভিতের এই সড়কটিতে রয়েছে একাধিক শীশা লাউঞ্জ, রয়েছে টার্কিশ আইসক্রিমও। ব্যাংককের বারগুলোতে বিনোদনের জন্য থাই আর বিদেশি মেয়েদের নিয়ে নানা ধরনের ফ্যাশন শো’র আয়োজন করা হয়। তবে আরব স্ট্রিটের বারগুলোতে চলে ‘অ্যারাবিয়ান শো’, ‘দেশি গার্ল ড্যান্স’। তবে এই সড়কটিতে অনেকগুলো থাই মালিকানাধীন দোকান রয়েছে। ধর্মে বৌদ্ধ হলেও আরবদের বশ করতে এখানকার কর্মচারীদের অনেকেই হিজাব পরে দোকান পরিচালনা করেন। সুকুম্ভিতের সড়কগুলোর মধ্যে আরব স্ট্রিট সবচেয়ে দামি। আরবরা দরকষাকষি পছন্দ করে না। তাই তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম হাকান দোকানিরা।আরব স্ট্রিটের ক্রিয়েটিভ ট্যুরিজম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর মাহমুদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই এলাকায় প্রতিটি খাবার ও কেনাকাটায় অতিরিক্ত দাম ধরা হয়। কারণ আরবরা দর কষাকষি করে শক্তি ব্যয় করতে রাজি নয়। একইভাবে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা কখনোই দর-দাম করে না। আর এই সুযোগে বেশি দাম হাকান দোকানিরা। এআর/এসকেডি/একে/এবিএস