দেশজুড়ে

৪ বছরেও শুরু হয়নি ঘাট আধুনিকায়নের কাজ

বর্ষার আগেই ভাঙছে পদ্মার পাড়। এতে করে ঝুঁকিতে রয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। বর্ষায় ভাঙনের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা নদীপাড়ের মানুষের।

গত কয়েক বছরে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পদ্মার ভাঙনে প্রায় ৮০০ হেক্টর জমি বিলীন হয়েছে। কয়েক দফায় ভাঙনের মুখে পড়েছে লঞ্চ ও ফেরিঘাট। গৃহহীন হয়েছে ঘাট এলাকার শত শত পরিবার। এরপরও ভাঙনরোধে নেওয়া হয়নি তেমন কোনো পদক্ষেপ। এদিকে প্রকল্প পাশের চার বছরেও শুরু হয়নি ঘাট আধুনিকায়ন কাজ। এমনকি ভাঙনরোধে পাড়ে এখন বস্তাও ফেলা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্যমতে, জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান, তা সম্পন্ন হলেই কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের তীর প্রতিরক্ষার কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কাজের ডিজাইন অনুযায়ী ইস্টিমেট করে জমা দেওয়া হয়েছে, দপ্তরের অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের উপহারে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেলো ৪ পরিবার

জানা গেছে, ২০২০ সালে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের উভয় প্রান্তে ৮ কিলোমিটার ঘাট আধুনিকায়নের জন্য এক হাজার ৩৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়। এরপর ডিজাইন, বরাদ্দ জটিলতা ও ভূমি অধিগ্রহণে এখনও শুরু হয়নি স্থায়ী কাজ। ফলে প্রতি বছরের পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দৌলতদিয়া ঘাটসহ আশপাশের এলাকা। ঘাট আধুনিকায়নে দৌলতদিয়া প্রান্তে ৬ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ হবে। এদিকে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান, মজিবর মন্ডল, সৈয়দ আলী শেখ, হাসিনা জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েক বছর ধরে শুনে আসছেন নদীশাসনের কাজ হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কাজ শুরু হয়নি। এখন দৌলতদিয়ার কয়েকটি গ্রামসহ লঞ্চ ও ফেরিঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে আছে। এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো বস্তাও ফেলা হয় নাই। স্থায়ী কাজের অপেক্ষায় থাকলে সব নদীগর্ভে চলে যাবে। তাই স্থায়ী কাজ শুরুর আগে জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করতে হবে।

ফেরিঘাট এলাকার জামাল ব্যাপারী ও রুস্তম বলেন, ভাঙন শুরু হলেও কোনো কাজ শুরু হয়নি। এখন বস্তা ফেলা না হলে ফেরিঘাটসহ আমাদের বসতবাড়ি নদীতে চলে যাবে। ফলে স্থায়ীকাজের অপেক্ষায় না থেকে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ম্যানেজার মো. নূরুল আনোয়ার মিলন জানান, তারা ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ আপাতত জিও বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও ভাঙনরোধ হবে।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় বজ্রপাতে জেলের মৃত্যু

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন বলেন, ভূমি অধিগ্রহণসহ গাছপালার বিষয়ে কাজ চলমান। ফরিদপুর বন বিভাগ এসবের কাগজপত্র রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছে। দ্রুত এসবের নোটিশ জমির মালিকদের কাছে যাবে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, দৌলতদিয়ার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন দপ্তরে বাজেট বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু হবে। মূলত ঘাট এলাকায় কাজ করে বিআইডব্লিউটিএ এবং ঘাটের আপ ও ডাউনসহ অন্যান্য স্থানে কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্প বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক অনুমোদন হয়েছে। এই প্রকল্পের তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ নিয়ে ২০২০ সালে তাদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই কাজের ডিজাইন গত মাসে পেয়ে ইস্টিমেট করে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলে মূল কাজ শুরু করতে পারবো। এ জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

রুবেলুর রহমান/জেএস/জিকেএস