সুন্দরবনের শেলা নদীতে কয়লা বোঝাই কোস্টার ডুবির ঘটনার পর সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিকল্প পথ হিসেবে মংলা-ঘোষিয়াখালি নৌপথে নৌযানগুলো চলাচলের অনুরোধ জানানো হয়েছে।নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর সোমবার সকাল থেকে বিআইডব্লিউটিএ সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে সব ধরনের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আশরাফ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে ডলফিনের অভয়াশ্রম শ্যালা নদীতে শনিবার সন্ধায় এক হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ ডুবির ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে জাহাজের মালিকসহ ছয়জনকে আসামি করে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করা হয়েছে। তবে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটির উদ্ধার অভিযান শুরু হয়নি।রোববার মধ্যরাতে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বাদী হয়ে এমভি সী হর্স-ওয়ানের মালিক মনিরা কবির, সমতা শিপিং এজেন্ট মালিক আজিজুর রহমান, ম্যানেজার জামাল হোসেন, জাহাজের মাস্টার মো. সিরাজুর ইসলাম মোল্লা, পাইলট মো. ইসমাইল হোসেন ও শুকানী শহিদুল ইসলামকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করে।জাহাজ ডুবির ঘটনায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের আলাদা তদন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ শুরু করেছে। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষককে কামাল উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি সোমবার সন্ধ্যায় তাদের তদন্ত রিপোর্ট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাছে দাখিল করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম। এর আগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেল নিয়ে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে একটি ওয়েল ট্যাংকর ডুবে যায়। সেই ঘটনার পর সুন্দরবনের অভ্যন্তরের এ নৌপথটি বন্ধে জোর দাবি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন। এমনকি সুন্দরবন ঘুরে দেখে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলও বিশ্বের বিপন্ন প্রায় প্রজাতির ডলফিন ‘ইরাবতী’র অভয়ারণ্য শ্যালা নদীসহ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বাণিজ্যিক নৌ চলাচল বন্ধের সুপারিশ করে। এ ঘটনার ১০ মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর শ্যালা ও পশুর নদীর মোহনায় এমভি জিয়া রাজ নামে কয়লাবাহী একটি কার্গো জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ওই কয়লাবাহী কার্গো জাহাজটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে চিহিৃত সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর ‘হরিণটানা’ বন টহল ফাঁড়ির কাছে শনিবার সন্ধ্যায় এক হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ‘এমভি সী হর্স-১’ নামে কার্গো জাহাজটি ডুবে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই ওই কার্গো জাহাজটি নদীতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে যায়। পরে রোববার সকালে নৌবাহিনীর ডুবুরি দল ডুবে যাওয়া কার্গোটি শনাক্ত করে।শ্যালা নদীতে এবার কয়লা বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ ডুবির ফলে আবারো সংকটে পড়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম জানান, ডুবে যাওয়া এই লাইটারেজ জাহাজ থেকে বিপুল পরিমান কয়লা শ্যালা নদীতে পড়ে গেছে। জাহাজটিতে কি পরিমাণ জ্বালানি তেল রয়েছে- তা এখনো নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। ডুবে যাওয়া কার্গোর তেল ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে মিশে বনের ক্ষতি করছে বলে জানান তিনি।পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম সুন্দরবনে ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় কয়লা বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ ডুবির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্র্রকাশ করে জানান, অবিলম্বে সুন্দরবনের মধ্যদিয়ে সকল প্রকার নৌযান স্থায়ীভাবে চলাচল বন্ধ করা উচিত। সরকার সুন্দরবনের ডলফিনের অভয়ারণ্য শ্যালা নদীতে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করতে দেয়ায় একর পর এক এই ধরনের জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম থেকে কলয়া বোঝাই করে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যশোরের নোয়াপাড়া বন্দরে যাবার পথে শ্যালা নদীতে শনিবার সন্ধ্যায় তলা ফেটে এমভি সী হর্স ওয়াট কার্গো জাহাজটি ডুবে যায়। ওই সময়ে ওই কার্গো জাহাজে থাকা মাস্টারসহ ১৪ জন ক্রুকে অয়েল ট্যাংঙ্কার নূর জাহানের ক্রুরা উদ্ধার করে রাতেই শরণখোলা রেঞ্জের বগী ফরেস্ট অফিসে পৌঁচ্ছে দেন দেয়া হয়।শওকত আলী বাবু/এআরএ/আরআইপি