দেশজুড়ে

এক মণ্ডপে ২০১ প্রতিমায় দুর্গাপূজা, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

ফরিদপুরে মোট ৮৩৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরের শ্রী শ্রী হরি মন্দিরের এক মণ্ডপে ২০১টি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। মূলত সনাতন ধর্মের বিভিন্ন কাহিনী অবলম্বনে ও ৫২ খণ্ডে বাঙালি হিন্দুদের অন্যতম শারদীয় দুর্গোৎসব এখানে অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজা চলবে পাঁচদিন। ২৪ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এ বছর ঘটকে চরে দেবী দুর্গা মর্ত্য লোকে পদার্পণ করবেন। আবার ঘটকেই কৈলাসে ফিরবেন।

ফরিদপুরে বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব মণ্ডপেই চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। দিনরাত প্রতিমা তৈরির পর শেষ মুহূর্তে রং-তুলিতে প্রতিমা সাজাতে ব্যস্ত কারিগররা। অধিকাংশ পূজা মণ্ডপের প্রতিমা তৈরির মূল কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এখন শুধু চলছে সাজ-সজ্জা ও রঙয়ের কাজ। সীমিত পরিসরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে পূজামণ্ডপগুলো। এখন শুধু প্রতিমা পরিপূর্ণ রূপ দিতে রং তুলির শেষ আঁচড় দেওয়া হচ্ছে। দুই এক দিনের মধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করা হবে।

আরও পড়ুন: শার্শায় চলছে দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মধ্যে আলফাডাঙ্গা উপজেলার পৌর সদরের শ্রী শ্রী হরি মন্দিরে দুর্গা পূজার আয়োজন একটু ব্যতিক্রমধর্মী। পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে এখানে সত্য, দ্বাপর, ত্রেতা ও কলি এই চারকালে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে ভগবানের অংশ হিসেবে যে চারজন অবতার আবির্ভূত হয়েছেন (শ্রীহরি, শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীগৌরাঙ্গ), তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে ৫২টি খণ্ডের মাধ্যমে। একটি পূজা মণ্ডপজুড়ে আলাদা আলাদা কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে প্রতিমা সাজিয়ে পূজা উদযাপন করা হবে।

পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী সত্যযুগে শ্রীহরির নিদ্রা, ত্রেতাযুগে রামচন্দ্রের বিয়ে, বনবাস, সীতাহরণ, দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণের কংসের কারাগারে জন্ম, জন্মের পর নন্দালয়ে গমন, নৌকাবিলাস এবং কলিযুগে জগাই-মাধাইয়ের শিষ্য হওয়া, নগরকীর্তন প্রভৃতি কাহিনী নিয়ে এই ৫২ খণ্ড তৈরি করা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে রয়েছে মোট ২০১টি প্রতিমা।

আরও পড়ুন: মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজার ক্ষণ গণনা

ভারত থেকে আগত প্রতিমা শিল্পী অনিল পালের ছয়জন সহযোগী নিয়ে প্রতিমাগুলো তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় তিনমাস। গত বছরও তিনি এখানে ১০১টি প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। তবে এবার তিনি গত বছরের চেয়েও ১০০ প্রতিমা বেশি তৈরি করেছেন।

প্রতিমা শিল্পী অনিল পাল জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর ১০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। তাতে অত্র অঞ্চলের মধ্যে প্রতিমাগুলো দর্শনার্থী ও ভক্ত বন্দের পছন্দ হয় এবং অত্র এলাকার মধ্যে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা উদযাপিত হয়। এবার ছয়জন সহযোগী নিয়ে তিনমাস ধরে কাজ করছি। গতবারের চেয়ে এবার ১০০ প্রতিমা বেশি। মোট পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে এবার ২০১টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। আশাকরি গতবারের চেয়েও এবার বেশি ভালো হবে।

আরও পড়ুন: তুলির আঁচড়ে সাজছে প্রতিমা

শ্রী শ্রী হরি মন্দির কমিটির সভাপতি নিত্য গোপাল মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর অত্র অঞ্চলের মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বর্তমানে তরুণসমাজের একটি বড় অংশ ধর্ম বই খুব একটা পড়াশোনা করে না, অতীত জানে না। নানা ধরনের অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ওই তরুণদের অতীত স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই এ আয়োজন। আমার ধারণা ও বিশ্বাস, এসব দেখে আজকের বিভ্রান্ত তরুণসমাজ সঠিক পথে ফিরে আসবে।

এ বিষয়ে শ্রী শ্রী হরি মন্দির ও পূজা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, দেবী দুর্গাসহ ২০১টি প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে গতবারের চেয়েও এবার দেশের অন্যতম বড় পরিসরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর লাখো মানুষের আগমন ঘটেছিল। আশা করছি এবারও এ পূজা দেখতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে লাখ লাখ দর্শনার্থীরা আসবে। আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।

আরও পড়ুন: চিনিগুঁড়া ধানে তৈরি ১৮ প্রতিমা, পূজার আগেই মানুষের ভিড়

তিনি আরও বলেন, গত বছর প্রায় লাখ দশেক টাকার মতো খরচ হয়েছিল। এবার বাজেট বাড়ানো হয়েছে। এবার ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। মন্দির কমিটি ৫১ সদস্য বিশিষ্ট। সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন মানুষের দান-অনুদানই এই টাকার উৎস। ২০ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত এ পূজা ও প্রতিমার প্রদর্শনী চলবে।

এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এনায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আলফাডাঙ্গা হরি মন্দিরে গত বছর থেকে জেলার মধ্যে সেরা এবং জাঁকজমকপূর্ণ পূজা উদযাপন হয়ে আসছে। এবারও লাখের উপরে দর্শনার্থীদের ভিড় এবং আগমন ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। পূজা শুরুর আগেই প্রতিদিন সকাল বিকেলে দলে দলে লোকজন দেখতে আসেন।

আরও পড়ুন: আজ মহালয়া, শাঁখারী বাজারে উৎসবের লগ্ন শুরু

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ড. যশোদা জীবন দেবনাথ জাগো নিউজকে বলেন, ফরিদপুরে আসন্ন দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আশাকরি সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হবে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো.শাহজাহান জাগো নিউজ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা শেষ করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মন্দিরগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, আনসারসহ মোবাইল টিম কাজ করবে। আমাদের পুলিশ-আনসার বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে। পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ এই দুর্গাপূজা উৎসবটি নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হোক। এর জন্য যা যা প্রয়োজন জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে করা হবে।

আরও পড়ুন: দম ফেলার ফুরসত নেই কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের

তিনি আরও বলেন, এবারের দুর্গা পূজায় প্রত্যেক পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। প্রত্যেকটি পূজা মণ্ডপের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক কর্মী নিয়োগ করতে হবে। এছাড়াও পূজা চলাকালীন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এন কে বি নয়ন/জেএস/এএসএম