শিশুর আঙ্গুল কর্তন : সিলেট উইমেন্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা


প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চিকিৎসায় অবহেলায় শিশুর অঙ্গহানির অভিযোগে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে দরখাস্ত মামলাটি (নং-০৩/২০১৬) দায়ের করেন বাংলাভিশনের সিলেট অফিস স্টাফ ক্যামেরাপার্সন বদরুর রহমান বাবর।

মামলায় বাদী তার শিশু পুত্র সাফির চিকিৎসায় অবহেলা করে আঙ্গুলে ‘গ্যাংরিন’ হওয়ায় মৃত্যুর আশঙ্কা সৃষ্টি করায় ২৫ লাখ টাকা, গ্যাংরিন হওয়ায় আঙ্গুল কেটে ফেলার ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ লাখ টাকাসহ দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসহ আনুসাঙ্গিক খরচসহ মোট ৫০ লাখ টাকার হিসেব দাখিল করা হয়।

Sylhet
চিকিৎসা চলমান থাকায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ পরবর্তীতে আরো বাড়তে পারে বলেও মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়।

মামলায় আসামি করা হয়েছে, জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ‘হলি সিলেট হোল্ডিংস লিমিটেড’র প্রতিষ্ঠান সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজম্মিল আলী (সানু), পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. মোজাম্মেল হোসেন, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. জাবের আহমদ, অর্থপেডিক্স সার্জারি বিভাগের ইমও ডা. তানভীর আহমদ চৌধুরী, ইন্টার্ন শাফিনাজ মোস্তফা, অর্থপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী মো. সেলিম, অর্থপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও ব্রাদার তারেককে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেট নগরের নয়াসড়ক এলাকায় বাসার দরজার হেজবলে চাপ লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয় সাংবাদিক বাবরের ছেলে সাফি রহমান। ডানহাতের তর্জনিতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে বাসার পার্শ্ববর্তী সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই সময় সেখানে দায়িত্বরত ব্রাদার তারেক সাফির আঙ্গুলের গোড়ায় একটি রাবার ব্যান্ড বেঁধে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান পরিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসানের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের ৫ তলায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. জাবের আহমদের উপস্থিতিতে ডা. শাফিনাজ ও ডা. তানভীর শিশু সাফির আঙ্গুলে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করেন।

ওই সময় সাফির মা পারুল বেগম রাবার ব্যান্ড না খুলে ব্যান্ডেজ করার কারণ জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার ডা. জাবের আহমদ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

অপারেশন চলাকালে ডা. শাফিনাজ ও ডা. তানভীর মনোযোগী ছিলেন না। তারা একে অপরের সঙ্গে ঠাট্টা মশকরা করছিলেন এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখছিলেন বলে মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

হাসপাতালের ছাড়পত্রে ৩ দিন পর ড্রেসিংয়ের জন্য অর্থোপেডিক্স বহির্বিভাগে দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর সাফির হাতের ব্যথা না কমায় দু’দিন পর (২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি) হাসপাতালের বহির্বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডা. মহসিন সাফিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, এ সময় হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় নিজাম ব্যান্ডেজ খুলে আঙ্গুলে রাবার ব্যান্ড দেখে আবারো ডা. মহসিনের কাছে নিয়ে যান। পরবর্তীতে ডা. মহসিন হাসপাতালের ৫ম তলায় ডা. কাজী সেলিমের কাছে নিয়ে যান সাফিকে। সাফিকে দেখে ডা. কাজী সেলিম হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. জাবের আহমদকে ডেকে এনে সাফির হাতের অবস্থা দেখান। এতে হতভম্ব ডা. জাবের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান সাফিকে। সেখানে আঙ্গুলের রাবার ব্যান্ড কেটে পরদিন আবারো ড্রেসিং করানোর অনুরোধ জানান ডা. জাবের।

ভুল চিকিৎসায় সাফির আঙ্গুল নষ্ট করা হয়েছে বলে সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর উত্তেজিত হয়ে উঠলে চিকিৎসায় অবহেলার কথা স্বীকার করেন ডা. জাবের। সাফির পরবর্তী সকল ড্রেসিং নিজে করবেন বলেও জানান ডা. জাবের। এতে কোনো সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

পরবর্তীতে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী কয়েকবার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড্রেসিং করা হয় সাফির ক্ষতস্থান। এক পর্যায়ে ক্ষতস্থানে পুঁজ জমলে উইমেন্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. জাবের আহমদ হাসপাতালের প্যাডে মেডিএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্লাস্টিক সার্জন ডা. আবদুল মান্নানের কাছে রেফার্ড করেন। ওই দিনই ডা. মান্নানের কাছে সাফিকে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্ষতস্থানে গ্যাংরিন হওয়ায় ডানহাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলার জন্য বলেন।

Sylhet
এদিকে সাফির আঙ্গুল যাতে রক্ষা করা যায় তার জন্য সাফির বাবা-মা তাকে নিয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে গেলে সেখানেও হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলার জন্য বলা হয়। এতে নিরাশ হয়ে সিলেট ফিরে সাফিকে ডা. আবদুল মান্নানের তত্ত্বাবধানে মাউন্ট এ্যাডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি অপারেশনের মাধ্যমে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়।

এ ঘটনায় সাংবাদিক বাবর সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নুরুল আলমের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০১৫ সালের ২৮ জুলাই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য করেছেন।

মামলার বাদী বাংলাভিশনের সিলেট অফিসের স্টাফ ক্যামেরাপার্সন বদরুর রহমান বাবরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু সাফির চিকিৎসাকালে সংশ্লিষ্টরা চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। ছাড়পত্র লেখার সময় শিশু সাফির বাবা নামের স্থলে তানভীরের নাম লেখা হয়।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী জানান, চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে আমার ছেলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। হাসপাতালে অবহেলাপূর্ণ চিকিৎসাই এর জন্য দায়ি।

মামলার বাদীপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মো. আবুল হাসান, অ্যাডভোকেট সজল কুমার রায় প্রমুখ।

ছামির মাহমুদ/এমএএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।