যশোরে ইমেজ সঙ্কটে পুলিশ


প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ফেব্রুয়ারি মাসে তিন ঘটনায় ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে যশোরের পুলিশ প্রশাসন। কতিপয় কর্মকর্তার বেপরোয়া আচরণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সচেতন যশোরবাসী।

শহরের গাড়িখানা রোডের শতবছরের বসতির ৪০টি পরিবার উচ্ছ্বেদের পর দখল করে পুলিশ ক্লাব স্থাপন, শহীদ মিনারে বোমা বিস্ফোরণ ও আসাদ হলে পুলিশি তাণ্ডব এবং প্রেসক্লাবের সম্পাদককে পুলিশ সুপারের হুমকির ঘটনা মাসজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে পুলিশ।

যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানকে প্রত্যাহারের দাবিতে সরকারি এমএম কলেজ ও সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি প্রেসক্লাব সম্পাদককে হুমকির প্রতিবাদে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। উচ্ছ্বেদ করে পুলিশ ক্লাব করার প্রতিবাদে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি যশোর শহরের গাড়িখানা রোডের ‘বিরোধপূর্ণ’ জমিতে বসবাসকারী ৪০টি পরিবার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক উচ্ছ্বেদের পর দখল করে নেয় পুলিশ। ১৯১০ সালে সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়ে এই পরিবারগুলো বংশানুক্রমে এই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছেন। আর জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেওয়া জমিটি নিজেদের দাবি করে পুলিশ। এ নিয়ে আদালতে মামলাও বিচারাধীন। কিন্তু এরইমধ্যে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করে পুলিশ ‘গায়ের জোরে’ দখলে নেয় এই এলাকার দোকানপাট। এখন সেখানে ঝোলানো হয়েছে পুলিশ ক্লাবের সাইনবোর্ড। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় মানবাধিকার কর্মী রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিককেও নানাভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে।

২২ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক অভিযোগ করেন, তিনি পুলিশি খুন ও গুম আতঙ্কে ভুগছেন। তার কিছু হলে পুলিশ দায়ী থাকবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ফোনে প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক তৌহিদুর রহমানকে হুমকি দেন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। পুলিশি উচ্ছ্বেদ অভিযান নিয়ে গণমাধ্যমে ধারাবাহিক সংবাদ প্রচার করা হয়। এই সংবাদ প্রচার করায় যশোরের সাংবাদিকদের উপর বেশি ক্ষিপ্ত হন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যশোরের সাংবাদিক সমাজ। পুলিশ সুপারের প্রত্যাহারের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন। এর মধ্যে রয়েছে মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ ও প্রতিবাদ সভা।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ (এমএম) ক্যাম্পাসে অবস্থিত যশোরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ হামলাকারীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করলেও অজ্ঞাত কারণে ছেড়ে দেয়। ওই রাতেই কলেজ ক্যাম্পাসের আসাদ হলে অভিযানের নামে পুলিশ তাণ্ডব চালায়। সেখান থেকে ১০ জন ছাত্রকে পুলিশ আটক করে বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ফাঁসিয়েছে। ঘটনার পর সরকারি এমএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, একুশে ফেব্রুয়ারি রাতে আসাদ হলে পুলিশ তাণ্ডব চালিয়েছে। ব্যাপক ভাঙচুর ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশি তাণ্ডব ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানির প্রতিবাদে সরকারি এমএম কলেজ ও সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা লাগাতার ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে। তাদের দাবি, প্রকৃত হামলাকারীদের গ্রেফতার, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের অপসারণ ও আটক ছাত্রদের মুক্তি দিতে হবে।

২৫ ফেব্রুয়ারি যশোরের শহীদ মিনারে সন্ত্রাস, সাংবাদিকদের পুলিশি হুমকি ও বেআইনিভাবে উচ্ছ্বেদের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে যশোরের বাম রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে রাজি হননি যশেরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শহীদ আবু সরোয়ার। তিনি বলেন, মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। খুব শিগগির নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে। তিনিই এ প্রসঙ্গে কথা বলতে পারবেন।

মিলন রহমান/ এমএএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।