দুই ভাইকে জমি রেজিস্ট্রি দেয়ায় তাদের খুন করে ছোটন
আদরের প্রিয় ২ সন্তান জয় ও মনির ছবি বুকে নিয়ে কান্নায় যেন এখন শেষ সম্বল তাদের বাবা-মায়ের। কোনোভাবেই তাদের স্বান্তনা দিতে পারছে না প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্খীরা। স্কুল বন্ধ রেখে জয়- মনির সহপাঠিরাও ৩ দিনের শোক পালন করে যাচ্ছে।
এদিকে নগরীর ঢুলিপাড়ার ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন অতিবাহিত হলেও ঘাতক সৎ ভাই ঢাকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মো. আল শফিউল ইসলাম ছোটনকে এখনো পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। ২য় বিয়ে এবং এলাকায় জমি ক্রয় করা নিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে নিহত ওই ২ শিশুর বাবা-মা জানিয়েছেন।
তবে ওই হত্যাকাণ্ডে ছোটন ছাড়া আর কেউ জড়িত কিনা তা এখনো পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। ঘাতক ছোটনকে গ্রেফতারের পর এ রহস্যের জট খুলবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সোমবার ২য় স্ত্রী ও মামলার বাদী রেখা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, চলতি মাসের শুরুতে ১৮ লাখ টাকায় এলাকায় কিছু সম্পত্তি ক্রয় করা হয়। এ সম্পত্তি প্রথম স্ত্রীর সন্তান ছোটন ও নিহত জয়-মনির নামে রেজিস্ট্রি করার খবর শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ছোটন বাড়িতে এসে তার মা রোকেয়া বেগমের ইন্ধনে আমার ২ ছেলেকে হত্যা করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, আমার প্রথম স্ত্রীর বেপরোয়া চলাচলের কারণে ২য় বিয়ে করতে বাধ্য হই। ঢাকা থেকে আমার ছেলে ছোটন বাড়ি আসলে আগে থেকেই আমাকে মোবাইলে জানাতো। কিন্তু ঘটনার আগের দিন ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসার পর বাসায় রাতের খাবারও খায়নি। সকাল থেকে সবার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করে। এ সময় আমার প্রথম স্ত্রী এ বাড়িতেই ছিল। দুপুরে জয় ও মনিকে বাড়িতে একা পেয়ে নির্বিঘ্নে তাদের হত্যা করে মা-ছেলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ডে এলাকার একজন প্রভাবশালী লোকের ইন্ধন রয়েছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকেলে কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ রসুলপুর ঢুলিপাড়ার আবুল কালামের প্রথম স্ত্রী রোকেয়া বেগমের ছেলে আল শফিউল ইসলাম ছোটন তার সৎ ভাই মেহেদী হাসান জয় ও মেজবাউল হক মনিকে গলায় রশি পেঁচিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এসময় ব্যবসায়ী আবুল কালাম তার শ্বাশুড়ির চেহলাম উপলক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী রেখা বেগমকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভাল্লক গ্রামে ছিলেন। ব্যবসায়ী আবুল কালামের প্রথম স্ত্রী রোকেয়া বেগমের ৩ কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে আইরিন আক্তার ও তাহমিনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে, ছেলে মো. আল শফিউল ইসলাম ছোটন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করছে এবং ছোট মেয়ে সুফিয়া আক্তার তানজিনা স্থানীয় নেউরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী। দ্বিতীয় স্ত্রী রেখা বেগমের নিহত ২ সন্তান ছিল।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের ওসি প্রশান্ত পাল জানান, পারিবারিক কলহের কারণে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ হত্যাকাণ্ডের সময় ছোটনকে কেউ সহায়তা করেছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই এ রহস্যের জট খুলবে।
তিনি আরও জানান, পুলিশের একাধিক টিম ছোটনকে গ্রেফতারে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। খুব শিগগিরই তাকে গ্রেফতার সম্ভব হবে।
কামাল উদ্দিন/ এমএএস/পিআর