তিস্তা পাড়ের নারীদের স্বাবলম্বী করেছে মিনি গার্মেন্টস
নীলফামারীর তিস্তার দূর্গম চরে হতদরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করেছে মিনি গার্মেন্টস। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এ সমস্ত হতদরিদ্র নারীরা ব্যস্ত তাদের কাজ নিয়ে। এসব নারীরা শুধু কাজ করতে শিখেছে। তারা ব্যস্ত নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করার জন্য।
তিস্তার এ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে নেই কোন শিক্ষার আলো, সেখানে শুধু অবহেলিত সুবিধা বঞ্চিত ব্যক্তিদের বসবাস। যারা স্বচক্ষে দেখেছে তিস্তা নদীর ধ্বংস লীলা, নষ্ট হয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ফসল, নদীর অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা জমি, অকালে হারিয়ে গেছে অনেক প্রাণ।
পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্প এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের দরিদ্র-হতদরিদ্র পরিবার থেকে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গার্মেন্টস এর উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরি, তালাকপ্রাপ্ত, পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীদের গার্মেন্টস প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এলাকার নারীদের সুবিধার্থে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যাতে নিজের এলাকায় অল্প খরচে কাজ করতে পারে সেজন্য স্টুডেন্ট কেয়ারের সত্ত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং আলোচনা সাপেক্ষে সমঝোতার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে স্টুডেন্ট কেয়ারের মালিক পল্লীশ্রী রিকল কর্ম এলাকায় তার নিজস্ব উদ্যোগে খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দোহলপাড়া গ্রামে সাব সেন্টার (মিনি গার্মেন্টস) স্থাপন করেন এবং ৩০ জন নারীকে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। পরবর্তীতে উক্ত ৩০ জনের মধ্যে ২২ জন পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্প ও স্টুডেন্ট কেয়ারের সহায়তায় উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড থেকে পুনরায় ২ মাস ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে স্টুডেন্ট কেয়ারে কর্মরত আছেন।
বর্তমানে তারা গার্মেন্টস সাব সেন্টারে সেলাই এর কাজ করে প্রতি মাসে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা আয় করছে। যারা কখনও সরাসরি নগদ টাকা আয় করতে পারেনি, তারা এখন নিজেরা নগদ টাকা গুণতে পারছে।
দক্ষিণ দোহলপাড়া গ্রামের জহুরা বেগম (৩৮) জানায়, এতো দিন সেলাই এর কাজ করে মাসে দুই থেকে তিনশ` টাকা আয় করেছি। গার্মেন্টস থেকে প্রতি মাসে তার আয় হচ্ছে দুই হাজার আটশ` টাকা।
সালমা বেগম জানায়, আমাদের কাজ করতে হবে। বেশি কাজ করতে পারলে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের কারণে হতদরিদ্র নারীরা বাড়ির বাইরে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে তারা আজ স্বাবলম্বী।
স্টুডেন্ট কেয়ার এর সত্ত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, প্রথম দিকে তারা দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করলেও যখন তারা অভিজ্ঞ হবে এবং দক্ষতা অর্জন করবে তখন তারা মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা আয় করতে পারবে। পোশাকের গুণগত মান ভাল হলে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে এবং সেক্ষেত্রে আরও নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে এলাকার দারিদ্রতা হ্রাস পাবে এবং দরিদ্র পরিবারগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। 
পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মন জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তা পাড়ের অসহায় ও সম্বলহীন নারী বাড়িতে বসে মিনি গার্মেন্টসে চাকরি করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারের শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তা পাড়ের অসহায় সম্বলহীন নারীরা মিনি গার্মেন্টসে কাজ করে নিজের ও পরিবারের ব্যাপক পবিবর্তন এনেছে। এক সময় এসব হতদরিদ্র পরিবারগুলো ঠিকমতো খেতে না পারায় চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিকট সরকারি সাহায্যের জন্য ধরনা দিলেও এখন তারা ব্যস্ত থাকেন নিজের কাজ নিয়ে। সরকারি কোন সাহায্যের জন্য তারা ছুটে বেড়ায় না।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তার পাড়ের হতদরিদ্র নারীরা বিভিন্ন এনজিরি সহযোগিতায় স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। পল্লীশ্রীর সহযোগিতায় তিস্তা পাড়ের মিনি গার্মেন্টস তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিস্তার পাড়ের শিশুরা অভাব অনটনের কারণে এক সময় বিদ্যালয়ে যেত না। দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর পারিবারিক আয় বৃদ্ধির ফলে শতভাগ ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়মুখী হয়েছে।
এসএস/এমএস