চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের আমেজ

শত শত শিক্ষার্থী, সবার গায়ে কালো গাউন। কেউ ছবি তুলছেন মাকে নিয়ে, কেউ বাবার সঙ্গে। অনেকে এসেছেন নিজের সন্তানকে নিয়ে। সমাবর্তনের আগে দেখা মেলে ক্যাম্পাসজুড়ে এ আমেজ। সমাবর্তনের দিন বুধবার (১৪ মে) ভিড় থাকবে মনে করে অনেকেই ফটোসেশন শেষ করেছেন। রাত পর্যন্ত দেখা মেলে ক্যাম্পাসের সবকটি স্থানে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। সাবেক শিক্ষার্থীরা আসছেন নিজের প্রাণের বিভাগে, আনন্দ ভাগাভাগি করছেন বন্ধুদের সঙ্গে।
বুধবার সমাবর্তনের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। দীর্ঘ ৯ বছর পর হতে যাওয়া পঞ্চম সমাবর্তনে অংশ নেবেন ২২ হাজার ৫৬০ গ্র্যাজুয়েট। এরমধ্যে ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জন এমফিল ডিগ্রিধারী। সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ও চবির সাবেক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। পাশাপাশি ইউজিসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ আরও চার উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করবেন।
সমাবর্তনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের। শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল লাইনে প্রবেশ করতে হবে এবং দুপুর ১টার পর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। ব্যক্তিগত যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে থাকবে পার্কিং এবং বাস ট্রান্সফারের ব্যবস্থা। যাতায়াতের জন্য শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাড়বে ১০০টি বিশেষ বাস এবং চলবে চারটি বিশেষ শাটল ট্রেন। অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য থাকবে শাটল বাস সার্ভিস।
সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাস সেজেছে আলোকসজ্জায়। সবগুলো ভবনে রং করা হয়েছে, ডিপার্টমেন্টে করা হয়েছে আলপনা।
মা ও বাবাকে গাউন পরিয়ে ছবি তুলছিলেন আইন অনুষদের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমি গতকাল ঢাকা থেকে এসেছি। আব্বা আম্মা ও খালাম্মা এসেছে সঙ্গে। নিজের সমাবর্তনের সাক্ষী হবেন আব্বা, আম্মা। সন্তান হিসেবে এর থেকে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না।
মিজানুর রহমানের বাবা বলেন, এই তো সেদিন ছেলেটা আইন অনুষদে চান্স পায়। এ সংবাদ আমাদের সবার মাঝে খুশি নিয়ে আসে। ছেলেকে নিয়ে সবখানে গর্ব করতাম। আজ ছেলে অফিসিয়ালি ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিচ্ছে। ছেলের আনন্দ আমাদের জন্য বিশাল প্রাপ্তি।
আইন অনুষদের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন বলেন, নয় বছর পর বহুপ্রত্যাশিত সমাবর্তন আয়োজন-বন্ধুদের সঙ্গে আবার মিলিত হওয়ার আনন্দই যেন অন্যরকম। এই বিশেষ দিনে মাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পেরেছি, যা হৃদয়কে উষ্ণতায় ভরিয়ে দিয়েছে। তবু কোথাও একটা শূন্যতা থেকেই যায়-সমাবর্তন যদি নিয়মিত হতো, হয়তো আব্বুকে সঙ্গে আনতে পারতাম। ২০২০ সালে চিরকালের জন্য আব্বু আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
ক্যাম্পাসের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ক্যাম্পাসের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। এসএসএফের প্রায় পঞ্চাশেক গাড়ির বহর সমাবর্তন এলাকায় মক প্রস্তুতির মহড়া দিয়েছে। ভিসি এবং প্রোভিসি স্যাররা প্রেস কনফারেন্স করেছেন। বিভাগগুলো উৎসাহের সঙ্গে সমাবর্তীদের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করছে। সমাবর্তীরা ক্যাম্পাসে প্রাণোচ্ছল পরিবেশে গাউন পরে ঘোরাফেরা করছেন, ছবি তুলছেন। বিভিন্ন প্রকারের সরকারি দপ্তর তাদের শেষ মুহূর্তের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আগামীকাল আমাদের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা শুধু সময় গুনছি। সমাবর্তনের প্যান্ডেল শতভাগ প্রস্তুত। আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা গত দুদিন ধরে আনন্দ করছেন। তাদের অন্যতম আনন্দ হবে প্রধান উপদেষ্টাকে পাওয়া। কনভোকেশন শুধুই সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই দেশকে পুনর্গঠন করবেন সে বিষয়ে বার্তা নিয়ে যাওয়া।
আহমেদ জুনাইদ/জেডএইচ/এমএস