জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
‘শেষ দেখা নামাজে, তারপর ইয়ামিন ফিরলেন শহীদ হয়ে’
‘ইয়ামিন বললো আমার মিরপুরে কোনো হাসপাতাল পরিচিত আছে নাকি। তার বন্ধুদের অনেকে আহত হয়েছে। মিরপুরে পরিচিত হাসপাতাল না থাকায় তাকে টেকনিক্যালের একটি মেডিকেলের কথা বলেছিলাম। তখনই কিছুটা রাগ হয়ে ইয়ামিন বললো যাও তুমি তোমার কাজে যাও। আমি বলি মিরপুরের কথা, তুমি বলো টেকনিক্যালের কথা।’
কথাগুলো বলতে বলতে কাঁদছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন। সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) টিএসসির অডিটোরিয়ামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে এভাবেই ছেলের স্মৃতি তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, সেদিন আমি এই কথা বলে বাইরে চলে যাই, বাসায় ফিরে দেখি তার মন খারাপ। আমার সঙ্গে সে কথাও বললো না। আমি তাকে গোসল করতে দেখে মসজিদে নামাজে যাই। জামাত শেষে যখন আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি তখন তাকে কয়েক কাতার পেছনে দেখতে পাই, সে হয়তো কিছুক্ষণ পরে গেছে। পরে দুপুর ২টার দিকে তার মা আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, ইয়ামিন তার বন্ধুদের দেখতে যাবে বলে বের হয়ে গেছে।
তারপর আমি তাকে বেশ কয়েকবার ফোনে চেষ্টা করেও পাইনি, তার মাও চেষ্টা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর ফোনটা রিসিভ হয় এবং তার ফোন থেকেই একজন আমাদের এনাম মেডিকেল কলেজে যেতে বলেন। আমরা ভেবেছিলাম হয়ত সে আহত হয়েছে। কিন্তু মেডিকেলে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পর আমরা ইয়ামিনকে আর জীবিত পায়নি। আমরা দেখি ইয়ামিন কাত হয়ে শুয়ে আছে। ইয়ামিনকে নিয়ে যেতে চাইলে তারা কিছুটা আপত্তি জানায়, কিন্তু পরে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে আসলে তারা আমাদের ছেড়ে দেয়। এরপর পুলিশি বাধার কারণে ইয়ামিনকে আমরা আমাদের সোসাইটির কবরস্থানে দাফন করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সন্তানরা যে বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিয়েছিল তা আজও দূর হয়নি। ২ হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন, প্রায় ২০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের ন্যূনতম স্বীকৃতি ও বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। আদৌ কি কোনো বিচার হয়েছে? কোনো সংস্কার হয়েছে? এ দেশে যদি আগের মতই থাকে তাহলে আমরা মনে করব আমরা অভাগা পিতা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত জুলাই আন্দোলনের আরেক শহীদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা কান্না ভেজা কণ্ঠে বলেন, বেঁচে থাকলে আমার ছেলে এবার এইচএসসি পরিক্ষায় বসত। আমার ছেলে ভালো স্টুডেন্ট ছিল। তার সরকারি চাকরি করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না, তার পরও সে আন্দোলনে যেত। কারণ গত ১৫/১৬ বছরে যে গুম-খুন-হত্যা হয়েছে সেটা বাচ্চারা মেনে নিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন বলল কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক তখন আর কেও বসে থাকতে পারেনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২৪ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এইচ এম তারিক হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজ। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল লতিফ, শেকৃবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেলাল হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মো. আবুল বাশার, প্রক্টর অধ্যাপক আরফান আলী।
সঞ্চালনার দ্বায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আশাবুল হক ।
সাইদ আহম্মদ/এমআইএইচএস/জিকেএস