সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এখন চাকরিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে

মো. নাহিদ হাসান
মো. নাহিদ হাসান মো. নাহিদ হাসান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শিক্ষার মানের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। আজ অধিভুক্তির সাত বছর পূর্ণ হলো। এই দীর্ঘ সময়ে সাত কলেজের শিক্ষার মানের কতটা উন্নয়ন হয়েছে, সংকটই বা কতটা কেটেছে- এসব নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য ৷ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি মো. নাহিদ হাসান।

জাগো নিউজ: অধিভুক্তির সাত বছর পূর্ণ হলো ৷ এই দীর্ঘ সময়ে শিক্ষার মানের কতটা উন্নয়ন হলো?

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এটা একটা পাইলটিং ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজ আছে। সেভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজকে নেওয়া হয়। অধিভুক্ত এই সাত কলেজে সাত বছরে শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন যা হয়েছে তা এই দিক থেকে দৃশ্যমান যে, আমাদের শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য জায়গায় যেতে পারছেন।

আরও পড়ুন>>ঢাবি ও অধিভুক্ত কলেজের ১১৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

‘উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি আমাদের কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বা গণিতের যারা শিক্ষার্থী, তাদের অনেকেই বুয়েটে এমফিল করছেন। ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জার্মানিতে গবেষণা করছেন। শিক্ষার্থীরা ব্যাংক বা অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির পর আমাদের সিলেবাসের পরিবর্তন হয়েছে। ঢাবির অধীনে যে শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন তারা এখন মাস্টার্সে। তাদেরও মাস্টার্সের সিলেবাসের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে মান উন্নয়ন অবশ্যই ঘটেছে।

জাগো নিউজ: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ঢাবির ভূমিকা কেমন ছিল?

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: পর্যায়ক্রমে সেই কাজগুলো চলছে। সিলেবাসের পরিবর্তন, আমাদের শিক্ষকদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাপ-আলোচনা করে তাদের সিলেবাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনা। এসব কাজ চলছে। ফলে মান উন্নয়নের কাজ দৃশ্যমান হবে যখন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবন বা অধিকতর উচ্চশিক্ষায় যাবে। এছাড়া এটা বোঝা যাবে না।

জাগো নিউজ: অধিভুক্তির পর সাত কলেজের সিলেবাসে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিলেবাসের আলোকে পাঠদানে শিক্ষকরা কতটা দক্ষ?

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছেন। যদি সিলেবাসের কোনো সমস্যা থাকে, শিক্ষকদের পড়ার বাইরে কোনোকিছু থাকে, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ বা শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে নিচ্ছেন। শিক্ষকদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের পরিকল্পনার কাজ চলছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।

জাগো নিউজ: অধিভুক্ত এই সাত কলেজের একাডেমিক বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়, আর প্রশাসনিক বিষয় নির্ভর করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিলেবাসের তারতম্য হলেও শিক্ষকরা বদলি হচ্ছেন। এক্ষেত্রে পাঠদানে জটিলতা বা অসুবিধা হয় কি?

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আমি আশার কথা বলি, কোনো শিক্ষক যদি সাত কলেজে বদলি হয়ে আসেন তিনি বিভাগের অন্য শিক্ষকদের থেকে পরামর্শ নেন এবং নিজেকে প্রস্তুত করেন। নতুন শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আমরা সেই সুযোগটা রাখি, যেন তিনি যে কোর্সগুলো আগে পড়িয়েছেন সেগুলোর ক্লাস নেবেন এবং অন্য সহকর্মীদের সহযোগিতায় নতুন কোর্সগুলোতে তিনি নিজেকে দক্ষ করে তুলবেন।

আরও পড়ুন>>তিন শিক্ষার্থীকে মারধর, ছাত্রলীগকর্মী বললেন ‘কুৎসা’ রটায়েন না

জাগো নিউজ: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের শিক্ষার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, সাত কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা সেটি কি পাচ্ছেন?

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের সবচেয়ে ভালো ফলাফল নিয়ে আসতে হবে। আমরা যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান, ফলে এটা আমরা সবসময় অনুভব করি যে, আমাদের সম্পদ আছে, সেই সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের কিভাবে সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে পারি।

জাগো নিউজ: সাত কলেজে শিক্ষক, অবকাঠামো সংকট রয়েছে কি না, থাকলে উচ্চশিক্ষায় কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে?

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আমাদের সকালে যদি পরীক্ষা থাকে তাহলে দুপুর দেড়টা থেকে ক্লাস চলে। সকালে এবং বিকেলে পরীক্ষা থাকলে সেদিন অনলাইনে ক্লাস হয়। অর্থাৎ ক্লাসগুলো সমন্বয় করে নেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ হওয়া বা তাদের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আমাদের শিক্ষাপ্রকৌশন অধিদপ্তরের সহায়তা নিতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে অবকাঠামোগত যে সমস্যা আছে সেটা কাটিয়ে উঠতে পারি।

জাগো নিউজ: আইন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আইসিটি- এ ধরনের বিষয় সাত কলেজে চালুর কথা ছিলো। এর অগ্রগতি কতটুকু?

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এটার পক্রিয়া চলমান। এ বিষয়গুলোর তালিকা আমাদের কাছে চাওয়া হয়েছিলো। বিষয়গুলো খোলা হলে শিক্ষার্থীরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে, চাকরির বাজারে তুলনামূলক সুবিধা আদায় করতে পারবে, যাচাই-বাছাই করে সেগুলোর তালিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছি। যাচাই-বাছাই চলছে। পরে সেগুলো খোলার বিষয়ে কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন>>ঢাকায় সব সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে বসবে সিসি ক্যামেরা

জাগো নিউজ: আপনি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। সাত কলেজের সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: শিক্ষার্থীদের আমি সবসময় বলি, এটা (ইডেন কলেজ) যেহেতু মেয়েদের কলেজ, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি বা প্রস্তাব নিয়ে সবসময় কলেজে ঢুকতে পারে না। তাই তারা যেকোনো সময় আমাকে ফোন করতে পারে, মেসেজ (এসএমএস) পাঠাতে পারে। আমরা মূলত শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্রিজ হিসেবে কাজ করছি। তাই শিক্ষার্থীদের সমস্যা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেটি বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দেই এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে সমস্যার সমাধান হয় সেই ব্যবস্থা করি। শিক্ষার্থীদের বলবো, তারা যেন নিয়মিত ক্লাস করে এবং অভ্যন্তরীণ সব পরীক্ষায় অংশ নেয়।

জাগো নিউজ: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আপনাকেও ধন্যবাদ।

ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।