শেকৃবি ছাত্রীর আত্মহত্যাচেষ্টা

ক্লাস-পরীক্ষায় অসহযোগিতা, পদ্ধতির পরিবর্তন চান শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ২৬ মার্চ ২০২৩

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা হলের ১০ তলা আবাসিক ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে এক ছাত্রীর আত্মহত্যাচেষ্টার খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত ওই ছাত্রী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। চিকিৎসকরা বলছেন ওই ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। মাথায় আঘাত না থাকলেও তার হাত, পা এবং কোমর ভেঙে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকাল ৯ টা ১০ মিনিটে এ ঘটনায় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী হলের গার্ড পাভেল ভূঁইয়া বলেন, হঠাৎ শব্দ শুনে গার্ড রুম থেকে বাইরে এসে দেখি এক ছাত্রী নিচে পড়েছে। লাফ দেওয়ার সময় কাঁঠাল গাছের ওপর ডাল ভেঙে নিয়ে নিচে পড়েছে। যতটুকু দেখেছি হাত ভেঙে হাড় বের হয়ে গেছে।

এদিকে আত্মহত্যাচেষ্টার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনার কারণ নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ডিউ ও ক্লাসে উপস্থিতি নিয়ে হয়রানির উল্লেখযোগ্য ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লেখ করার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যাবস্থা পরিবর্তন করতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়াতেও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তবে ওই শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে অসুস্থ দাবি করে অভিযোগগুলোকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে ঘটনার প্রায় দুই দিন পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য কোনো আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র হল কর্তৃপক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এমন উদাসীনতায় ছাত্রদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।

আরও পড়ুন>>> শেকৃবিতে হলের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যাচেষ্টা ছাত্রীর

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই ছাত্রীর চিকিৎসার খরচ বহনের প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যা খরচ তা তার পরিবার থেকেই করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয় করবে। এখনো সেরকম কোনো বড় খরচের প্রয়োজন হয় নি।

এদিকে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় ওই ছাত্রীর সুচিকিৎসাসহ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে পুনরায় দাবি তুললে তার চিকিৎসা খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে বলে আশ্বস্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে সোমবার লিখিত আকারে দাবি উল্লেখ করতে বলেন তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।

ওই ছাত্রীর সহপাঠিরা জানান, তিনি ১৭ ব্যাচের হলেও অসুস্থতা ও অন্যান্য কারণে দুবছর গ্যাপ দিয়ে বর্তমানে ১৯ ব্যাচের সঙ্গে পড়াশোনা চালাচ্ছিলেন। লেভেল-৩, সেমিস্টার-২ এ বেশ কয়েকটা সিটি পরীক্ষাও ডিউ ছিল। যেগুলো নিতে স্যাররা অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়া অসুস্থতার কারণে ক্লাসও ঠিক মতো করতে পারেনি। ফলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। গত বছর অসুস্থতার কারণেই ১৮ ব্যাচের সঙ্গে পড়াশোনাকালীন লেভেল-৩, সেমিস্টার-১ এ রি-এড (পুনঃভর্তি) আসে। সব কিছু মিলিয়ে একাডেমিক বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি।

তবে ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা একাডিমেক বিষয়ে চিন্তিত ও শারীরিক অসুস্থতার কথা বললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে তাকে মানসিক অসুস্থ বলে স্বীকৃতি দিতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন>>> হলে সিনিয়ররা গণরুমে, সিট বরাদ্দ পেলেন জুনিয়ররা

আত্মহত্যাচেষ্টার পর বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্তিতির জন্যে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার নিয়ম এবং পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য দাবি জানায়। এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শেকৃবি প্রক্টর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘উপস্থিতি সম্পর্কিত কিছু না, বরং তার মানসিক অবস্থা প্রথম বর্ষ থেকে খারাপ। যার জন্য তার চিকিৎসা চলছিল। মাঝে মাঝে ওষুধ খাওয়া মিস করে। গতকাল বাসা থেকে এসেছে, বাসায় মোবাইলও রেখে আসছিল সে।’

Srekribi2.jpg

পরে ওই ছাত্রীর মানসিক চিকিৎসা চলছিল এমন তথ্য কোথায় পেয়েছেন জানতে চাইলে প্রক্টর ড. হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘মেয়ের দুলাভাইয়ের থেকে আমি এ কথা শুনেছি।’

তার দুলাভাইকে সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কথা হয় নি। সে (ওই ছাত্রী) দীর্ঘদিন পেটের পীড়া ও জ্বরে আক্রান্ত ছিল। তবে তার কখনো কোনো মানসিক অসুস্থতা ছিল না।’

ওই ছাত্রীর মা মানসিক অসুস্থতার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার মেয়ে কখনো মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল না। সে দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। এর আগের সেমিস্টারে ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তখন আমি তার ডিন স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি আমাকে বাসায় যেতে দেননি। তিনি বাসার নিচেই টেলিফোনে আমাকে বলেন আপনার মেয়ে অসুস্থ থাকলে পরে পরীক্ষা দেবে। প্রয়োজন হলে সে পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে পরীক্ষা দেবে। এখানে আমার করার কিছুই নেই।’

কৃষি অনুষদের ডিন ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাসকে ওই ছাত্রীর একাডেমিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রী লেভেল-৩, সেমিস্টার-২ এ পড়ে এবং তার গড় সিজিপিএ ৩.৫১। লেভেল-৩, সেমিস্টার-২ এর যে ফাইনাল পরীক্ষা হবে এ জন্য উপস্থিতির পরিমান আমরা এখনো ডিপার্টমেন্ট থেকে চায় নি। তার আগের সেমিস্টারেও তার কোনো মেকআপ পরীক্ষা নেই।’

তার সঙ্গে ওই ছাত্রীর মায়ের দেখা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় কেউ আসে নি। তার মা কেন দুদিন আগে হলে এসেছিলেন সেটা তার মাকে জিজ্ঞাসা করেন। মায়ের সঙ্গে তার পারিবারিক কী সমস্যা হয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করেন। ওই ছাত্রী কেন কতদিন আগে মেন্টালে ছিল সে খবরও পেয়েছি। বিভিন্ন কারণে দুই দিন পরপরই সে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এগুলোর খবর নেন, এগুলা প্রকাশ করেন।’

আরও পড়ুন>>> শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ও আমাদের করণীয়

ওই ছাত্রী কোন মেন্টালে ভর্তি হয়েছিল এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বক্তব্য পরিবর্তন করে বলেন, ‘মেন্টাল বলিনি, হাসপাতাল বলেছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি ভালো না। ওই ছাত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেও নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কিছু শিক্ষার্থী এখন তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এসব করে তারা দায় এড়াতে পারে না। প্রশাসনের উচিত ওই ছাত্রীর চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ বহন করা এবং পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন করা’।

তাসনিম আহমেদ তানিম/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।