পলাতক থেকেও ঘাট দখলে রেখেছেন টুকুপুত্র রঞ্জন

আলমগীর হোসাইন আলমগীর হোসাইন , জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু গ্রেফতার হলেও পলাতক রয়েছেন তার বড় ছেলে অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন। তবে পলাতক থেকেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তার বাবার নির্বাচনী এলাকা বেড়া ও সাঁথিয়ার বেশ কিছু দখলদারি পয়েন্ট। পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দখলে রেখেছেন বিআইডব্লিউটিএর বৃশালিকা ঘাট। ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকিতে ঘাটে যেতে দিচ্ছেন না ইজারাদারকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার বার অভিযোগ দিয়েও সুরাহা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী ইজারাদার।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া একটি অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, বাঘাবাড়ী নদীবন্দরের অধীনে বেড়ার আমাইকোলা ঘাট থেকে মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ঘাটটি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ইজারার জন্য গত বছরের ১৬ মে দরপত্র আহ্বান করেন বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। ঘাটটি স্থানীয়ভাবে ‘বৃশালিকা’ ঘাট নামে পরিচিত। ওই মাসের ৩০ তারিখে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১৪ লাখ টাকায় নজরুল ইসলামের ‘মেসার্স বেড়া ট্রান্সপোর্ট’কে ইজারা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। শর্তানুযায়ী বেড়া ট্রান্সপোর্টকে উক্ত ঘাটের নৌযানের বার্দিং, যাত্রী ও মালামাল লোড আনলোডিংয়ের চার্জ আদায় করার নির্দেশও দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু জুন মাসে এতে প্রথম বাধা দেন টুকুপুত্র রঞ্জন। ঘাটে না যেতে ভয়ভীতি দেখান। পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিব রাশেদুল ইসলামকে দিয়ে পাবনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এছাড়া এক ব্যক্তির নামে একটি ভুয়া ইজারাপত্র তৈরি করে হাইকোর্টে রিটের মাধ্যমে ঘাটের ইজারার স্থিতাবস্থা আদেশ জারি করান। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ ওই রিটের বিরুদ্ধে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল করলে স্থিতাবস্থা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

পলাতক থেকেও ঘাট দখলে রেখেছেন টুকুপুত্র রঞ্জন

কিন্তু এতেও ক্ষ্যান্ত হননি রঞ্জন। সরকার পতনের পর রঞ্জন পলাতক থেকে শেখ মো. কামাল, হাবিবুর রহমান হবি, মেহেদী মির্জা, তানজিম, শফিকুল, ইশা ও রিগানসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে অবৈধভাবে ঘাট দখলে রেখেছেন। ঘাটের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও চার্জ আদায়ে ইজারাদারকে আইনি সহায়তা দিতে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিআইডব্লিউটিএ চিঠিতে জেলা পুলিশ ও র্যাবকে অনুরোধ জানালেও মেলেনি প্রতিকার।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইজারাদার নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার পতনের আগে আমার পেছনে লেগেছেন টুকু ও তার ছেলে রঞ্জন। রঞ্জনের কথামতো গত উপজেলা নির্বাচন না করায় তার পরিবারের বিরাগভাজন হতে হয় আমাকে।

তিনি বলেন, ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ার পর লোড আনলোডের কাজের সুবিধার্থে ও জমির মালিকরা যেন ক্ষতির সম্মুখীন না হন সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ৪.৮ একর জমি মালিকদের থেকে লিজ নিই। এতে আমার অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়েছে। অথচ ঘাট পাওয়ার পর থেকে একটি টাকাও আদায় করতে দেয়নি রঞ্জনের সন্ত্রাসী বাহিনী। এ নিয়ে এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে চিঠি দিইনি, তাতেও কোনো সমাধান মেলেনি। ১৪ লাখ টাকায় ঘাট নিয়েছি। ইজারার সাড়ে ৬ মাস সময় অতিবাহিত হলেও এ ঘাট থেকে একটি টাকাও আদায় করতে পারিনি। বড় ধরনের লোকসানে আমি এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে। দ্রুত এই ঘাট উদ্ধারের দাবি জানান তিনি।

পলাতক থেকেও ঘাট দখলে রেখেছেন টুকুপুত্র রঞ্জন

রঞ্জন পলাতক থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্তদের একজন হবিবুর রহমান হবি। তিনি বলেন, ওই ঘাটে আগে ব্যবসা করেছি, তখন জড়িত ছিলাম। এখন ব্যবসা না থাকায় সেখানে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। রঞ্জনের হয়ে জোরপূর্বক ঘাট দখলের প্রশ্নই আসে না। উল্টো রঞ্জন ও টুকুর সঙ্গে মিলে নজরুল আমাকে আগেও নানারকম হয়রানি করেছে, এখনো করছে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর বাঘাবাড়ী বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে পাবনার বেড়া থানার ওসি, পুলিশ সুপার ও র্যাবকে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে ইজারাদারকে আইনি সহায়তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তেমন সহায়তা মেলেনি। ব্যাপারটি দুঃখজনক। তবে এ আইনি সহায়তার জন্য আবার তাদের চিঠি দেওয়া হবে।

পাবনার পুলিশ সুপার মো. মোরতোজা আলী খানের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রেজিনুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। যদি এসপি স্যার বরাবর দিয়ে থাকেন তাহলে আমার জানার সুযোগ কম, যদি স্যার আমাকে না জানান। এক্ষেত্রে এসপি স্যারই বলতে পারবেন।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।