তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ০৭:৪৯ এএম, ১৪ আগস্ট ২০২৫
পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বর্ষণে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে/ছবি-জাগো নিউজ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বর্ষণে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রথমে ৭ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়, পরে তা কিছুটা কমে ৪ সেন্টিমিটারে নেমে আসে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৬টায় আবারও তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওউপরে রেকর্ড করা হয়েছে।

২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে নিম্নাঞ্চলের ৩০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

jagonews24

পাউবো জানিয়েছে, আগামী দুই দিন এই অঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্যা সতর্কতা কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে।

jagonews24

স্থানীয়রা বলছেন, জুলাইয়ের শেষ দিকে এবং আগস্টের শুরুতে দুই দফা পানি বৃদ্ধির পর এবার তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বারবার ত্রাণ বিতরণের চেয়ে সরকারকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে স্থায়ী সমাধান করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তারা।

আদিতমারী মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার মতিয়ার রহমান বলেন, বন্যার পানিতে সাত দিন ধরে রান্না করতে পারিনি। গরু-ছাগল ও পরিবারের সদস্যদের উঁচু জায়গায় রেখেছি। সাহায্যের চেয়ে চাই পানি যেন আর না আসে।

পানিবন্দি মর্জিনা বেগম বলেন, গরু-ছাগলের খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি। ১০ কেজি চাল পেয়েছি, কিন্তু এটা সমাধান নয়। বারবার যেন বন্যা না হয়, সেই ব্যবস্থা চাই।

jagonews24

খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, বারবার বন্যায় ধান, পাট, মাছ সব নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া মুক্তি নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। স্বল্পমতি বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সমাধানের জন্য পাউবো প্রস্তুত আছে।

চলতি মৌসুমে এটি তিস্তায় তৃতীয় দফা বন্যা। জুলাইয়ের ২৯ তারিখে প্রথম দফায় এবং ৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। এবার ১৩ আগস্ট থেকে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং এখনও বিপদের আশঙ্কা কাটেনি।

মহসীন ইসলাম শাওন/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।