বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল সাতক্ষীরার নলতায়


প্রকাশিত: ০৪:১১ এএম, ১২ জুন ২০১৬

পবিত্র কাবা শরিফের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরায়। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ওরস শরীফে দিন দিন এ ইফতার মাহফিলের পরিধি আরো বাড়ছে।

১৯৩৫ সালে খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রাঃ) নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে প্রতি বছরই রমজান মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পরও মিশন কর্তৃপক্ষ এ মাহফিলকে অব্যাহত রেখেছে।

pc-sat

প্রথম দিকে ইফতার মাহফিলে উপস্থিতি কম হলেও ধীরে ধীরে তার পরিধি বেড়ে এখন দশ হাজারে পৌঁছেছে। বর্তমানে শাহ সুফি খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর (রাঃ) রওজা প্রাঙ্গনেই এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রোজার শুরু থেকেই প্রতিদিন সেখানে একত্রিত হয়ে ইফতার করছেন প্রায় দশ হাজার মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা ইফতারের জন্য ছুটে যান সেখানে।

বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য অস্থায়ীভাবে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইফতারি বিলি-বন্টন ও তদারকির জন্য রয়েছে ৬ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক।

ইফতারি সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খেজুর, ছোলা, সিংগড়া, ফিন্নি, চিড়া, কলা ও ডিম। এত মানুষের ইফতারির আয়োজনের পরও পার্শ্ববর্তী ১৫-২০টা মসজিদে এক বার করে ইফতারি পৌঁছে দেওয়া হয়।

ছোলা, ডিম ও ফিন্নি বাবুর্চি বাবু হোসেন জাগোনিউজকে বলেন, প্রতিদিন ১৬ মণ দুধ দিয়ে ফিন্নি রান্না করা হয়। সিদ্ধ করা হয় ১০ হাজার ডিম। প্রতি বছরই আমি এখানে রান্নার কাজ করে থাকি। এ মাসটি আমরা রোজাদারদের খেদমত করি।

pc

সিঙ্গাড়া বাবুর্চি মুক্তার হোসেন বলেন, আমি এখানে ৩২ বছর ধরে সিঙ্গাড়া বানাই। ১৫ জন একত্রে কাজ করি। আসরের নামাজের আগেই সিঙ্গাড়া প্রস্তুত শেষ করে ফেলি।
 
স্বেচ্ছাসেবক ইসরাফিল হোসেন বলেন, আমরা ছয়শ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছি এখানে। সকলেই নিজ উদ্যোগে এখানে এসেছি। বিকাল ৪টার পর থেকে বণ্টন কাজ শুরু করি। চেষ্টা করি যেন আগত কোনো রোজাদারের কোনোরূপ অসুবিধা না হয়।

শনিবার বিকেলে হাজার মানুষের মত ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে আসা সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, রজমানে প্রতি বছরই আমি এখানে একসঙ্গে ইফতারি করার জন্য উপস্থিত হই। আমি একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি, হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে ইফতারি করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইফতারিতে অংশ নিতে আসা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার তোহা খান বলেন, শুনেছি এখানে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতারি করে। তাই আজ আমি অংশগ্রহণ করতে আসলাম। অনেক জ্ঞানী-গুনী মানুষ এখানে আসেন।

pc

নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী সদস্য ও ইফতার মাহফিলের তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল আনোয়ার রঞ্জু জাগো নিউজকে বলেন, ক্রমান্বয়ে এটার পরিধি বেড়েই চলেছে। নতুন মসজিদটা নির্মাণ হয়ে গেলে ওখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসার স্থান হবে। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে টিন ও বাশ দিয়ে ছাউনি করা হয়েছে। এখানকার সকল কর্মকর্তাদের ইচ্ছা কেউ যেন খালি মুখে ফিরে না যায়। কেউ যেন কষ্ট না পায়। এটিই আমাদের খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রাঃ) র চাওয়া।

নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয় ইফতারি করাতে। সব মিলিয়ে আমাদের ৩০ দিনে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যায় হয়। ভক্তরা এ টাকা পৌঁছে দেন। কখনো ঘাটতি পড়ে না। কোনো অসুবিধাও হয় না। ভক্তদের দেওয়া টাকা দিয়ে ইফতারি সামগ্রী ক্রয় করি।

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন দশ হাজার প্লেট প্রস্তুত করা হয় রোজাদারদের জন্য। কারো কোনো সমস্যা হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করতে পারিনি। পবিত্র মক্কা শরিফের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল।

আকরামুল ইসলাম/এফএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।