পাউবোর জমি দখল করে বিএনপি নেতাদের বহুতল ভবন-দোকানঘর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
পাউবোর জমিতে নির্মাণ করা ঘরবাড়ি/ছবি-সংগৃহীত

বরিশালের উজিরপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোটি টাকার জমি দখল করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে। উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি বাজার থেকে হারতা বাজার পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন পাশে চলছে এই দখলবাজি। তবে পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দখলদারদের নামে রেকর্ড বাতিলে তারা মামলা করেছেন।

সরেজমিন হারতা বাজারের উত্তর ও দক্ষিণপাড়, সন্ধ্যা নদীর শাখা খালের পাশের বেশিরভাগ জায়গা, বাজারের চান্দিনা ভিটি (খাসজমি) ও পাউবোর জমিতে বসতবাড়ি, দোকানঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা দেখা গেছে। অনেকে বালু-মাটি দিয়ে ভরাট করে বহুতল পাকা ভবন করেছেন। এক বছর আগেও জামবাড়ি বাজার থেকে হারতা বাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ ছিল ফাঁকা। এখন সেখানে ঘরবাড়ি, পাকা স্থাপনা। সাইনবোর্ড টাঙিয়ে যে যারমতো করে দখল করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে হারতা মৌজায় ১৬ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে পাউবো। ১৯৮৮ সালে সেখানে মাটি ভরাট করে বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। এটি ‌‘সাতলা-বাগধা সেচ প্রকল্প’ নামে পরিচিত। আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে ওই জমির দখল শুরু করেন দলটির নেতারা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তাদের জায়গা নেন বিএনপির স্থানীয় কিছু নেতা।

পাউবোর জমি দখল করে বিএনপি নেতাদের বহুতল ভবন-দোকানঘর

এলাকাবাসী জানান, দখল করা জমিতে সম্প্রতি বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেন ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আজিজুল সরদার। তিনি ইতালি থাকেন। তার স্বজনরা ক্রয়সূত্রে জমির মালিকানা দাবি করছেন। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ আরও কয়েকজন দোকান তৈরি করেছেন। আজিজুল সরদারের দখল করা জমির পরিমাণ ২৭ শতাংশ বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভবন নির্মাণের বিষয়টি এলাকাবাসী পাউবোকে একাধিকবার জানিয়েছেন। তবে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েও পদক্ষেপ নেননি।

পাউবোর জমি দখল করে বিএনপি নেতাদের বহুতল ভবন-দোকানঘর

হারতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফিরোজ হাওলাদার ৫ আগস্টের পর পাউবোর জমিতে দোকানঘর তুলেছেন সাতটি। পাশাপাশি একটি ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অহিদ হোসেন খাসজমিতে দোতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। সেখানে ভাই ভাই হোটেল নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চলছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে দুজনই ব্যস্ততার অজুহাতে মন্তব্য করতে চাননি।

পাউবোর জমিতে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে জানতে ইতালি প্রবাসী আজিজুল সরদারের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। আজিজুলের ভাতিজা আসাদ সরদার জানান, তার চাচা ২৭ শতাংশ সম্পত্তি ৩৮ লাখ টাকায় কিনেছেন। পাউবোর জমি কেনা যায় কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

পাউবোর জমি দখল করে বিএনপি নেতাদের বহুতল ভবন-দোকানঘর

এ বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহেশ্বর মণ্ডলের জানান, হারতা বাজারের চান্দিনা ভিটির তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। অবৈধ দখলদারের চিহ্নিত করা শেষ হলেই উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।

বরিশাল জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, হারতা সেচ প্রকল্পের জন্য পাউবো ১৬ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে ১৪ দশমিক ৮৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন দখলদাররা। এখন পাউবোর নামে রেকর্ড আছে দুই একর জমি। দখলদারদের রেকর্ড বাতিলের জন্য জোনাল সেটেলমেন্টে পাউবোর পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাঁধের জমিতে অবৈধ স্থাপনার তালিকা হচ্ছে। শিগগির উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

শাওন খান/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।