সুনামগঞ্জে বাংলা বই ছাড়া বছর পার সপ্তম শ্রেণির ৫৪ শিক্ষার্থীর

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯:৪০ এএম, ২১ অক্টোবর ২০২৫
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়

বছরের শুরুতেই নতুন বই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয় শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে নতুন ক্লাসের নতুন বই পড়তে আগ্রহের শেষ থাকে না শিক্ষার্থীদের। কিন্তু হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ের মুখ আজও দেখেনি শিক্ষার্থীরা। বছরের দশ মাস পেরিয়ে গেলেও বই হাতে পায়নি তারা। এতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও জেলার সচেতন মহল।

সোমবার (২০ অক্টোবর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা। সেখানে বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ৫৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত বাংলা পাঠ্যবই পায়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা বাংলা বই ছাড়াই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। সেখানে নতুন বই না থাকায় শিক্ষার্থীরা বাংলা বই সম্পর্কে তেমন ধারণাও নিতে পারেনি। বিষয়টি শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফলে একদিকে যেমন পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে বার্ষিক পরীক্ষা চলে আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকেয়া আক্তার (ছদ্মনাম) জাগো নিউজকে জানায়, ‘স্যার-ম্যাডামকে অনেকবার বলেছি বাংলা বই দেওয়ার জন্য, কিন্তু উনারা আমাদের কথা শুনেন না। বাংলা বই ছাড়া অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছি। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, এখনও বই পাইনি। দুশ্চিন্তায় আছি।’

আরেক শিক্ষার্থী ইয়াকুব মিয়া (ছদ্মনাম) বলে,‘বছরের শুরুতেই আমাদের নতুন বই পাওয়ার কথা। কিন্তু অন্য বইগুলো পেলেও এখন পর্যন্ত বাংলা বই পাইনি। এটা আসলেই দুঃখজনক।’

আরও পড়ুন-
পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই সনদ’
অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ে থাকছে না ৭ মার্চের ভাষণ
রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ি স্কুলে শিক্ষাসামগ্রী দিলো বিজিবি

তবে এ ঘটনার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস একে অপরকে দোষারোপ করছে।

সুনামগঞ্জে বাংলা বই ছাড়া বছর পার সপ্তম শ্রেণির ৫৪ শিক্ষার্থীর

বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চন্দ্র শেখর সরকার বলেন, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পায়নি সেটা সত্যি দুঃখজনক। তবে তারা বাংলা বই ছাড়া সবগুলো বই পেয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই লাগবে বলে জানালে তারা বইটি আমাদের দেয়নি।

তবে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বছরের শুরুতেই জেলার সব উপজেলায় শিক্ষার্থীদের বই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলার এত কাছে থেকে বিশ্বম্ভরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বই পাবে না সেটা হতে পারে না।

তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বইয়ের প্রয়োজন কিংবা চাহিদা আছে, সেটা আমাদের জানায়নি। তারা এখন যে কথাগুলো বলছে সেগুলো দায়সারা। শিক্ষার্থীদের বই প্রয়োজন হলে আমরা ম্যানেজ করে কিংবা ফটোকপি করে ছাপিয়ে দিতাম।

সুনামগঞ্জ জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি সনাকের সহসভাপতি খলিল রহমান বলেন, সামনে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা, অথচ বাংলা বই এখনো শিক্ষার্থীরা পায়নি। এর দায়ভার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা শিক্ষা অফিসের অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

পাঠ্যবই ছাপা ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বোর্ডের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কোনো কারণই নেই। মার্চ মাসের মধ্যেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব বই বিতরণ শেষ হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি বিষয়ের বই না গিয়ে থাকে, তাহলে দায়ভার সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো প্রকৃত ঘটনা কী এবং এতে দায় কার।’

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।