বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে সংকট: বেনাপোল দিয়ে যাত্রী কমেছে ৮৫ শতাংশ

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ১১:১৯ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি

ভারত ভ্রমণে ভিসা জটিলতা ও হাইকমিশন অফিস বন্ধের কারণে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত প্রায় ৮৫ শতাংশ কমে গেছে। গত তিনদিনে মাত্র ৫৩৯২ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করেছেন, যা আগের তুলনায় প্রায় ৮৫ শতাংশ কম।

একদিকে নানা কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসা অফিস বন্ধ করে দেওয়া ও ভিসা জটিলতা। অন্যদিকে ভারত সরকার নতুন নিয়মে অনলাইন ‘আগমন ফরম’ বাধ্যতামূলক করেছে। যেখানে ভ্রমণকারীদের জন্য ভারতীয় ভিসা অনলাইন অ্যারাইভেল ওয়েবসাইটে আগমন ফরম পূরণ বাধ্যতামূলক। এতে যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে এ ফরম পূরণ করে প্রিন্ট করে কপি সঙ্গে রাখতে হবে।

তবে যাত্রীদের অভিযোগ, ওয়েবসাইটের সার্ভার সচল না থাকায় আবেদন করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এর আগে যাত্রীদের ভারতের ইমিগ্রেশনে গিয়ে আগমন ফরম হাতে লিখে পূরণ করতে হতো। এখন অনলাইনে তা বাধ্যতামূলক করেছে ভারতের সরকার।

এছাড়া ভিসা ফি ও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে একজন যাত্রীকে ভারতীয় দূতাবাসে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সময় ১৫০০ টাকা ভিসা ফি বাবদ এবং ভিসা পাওয়ার পর ভ্রমণকর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের ১০৫৭ টাকা ভ্রমণ ফি ও পোর্ট চার্জ দিতে হচ্ছে। এটি গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ফলে চিকিৎসা, ব্যবসা বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে যাতায়াতকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এদিকে ভিসার জন্য পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমা দিলে ৯৫ শতাংশ যাত্রীকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে প্রতি যাত্রীর ১৫০০ টাকা করে গচ্চা যাচ্ছে।

মূলত ভিসা জটিলতায় ভ্রমণ কমছে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে। ভারত সরকার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে ট্যুরিস্ট, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ রাখে। শুধু মেডিকেল ভিসা চালু থাকলেও শর্তসাপেক্ষে মাত্র ৫ শতাংশ রোগীকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় ভিসা না পেয়ে অধিকাংশ রোগী দালালের মাধ্যমে জমা দিলে কিছু কিছু ভিসা মিললেও সেখানে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে নিচ্ছে দালালরা।

এছাড়া যে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেখিয়ে ভিসা নেওয়া হয়েছে, তার কাছেই চিকিৎসা করতে হবে। এই শর্ত লঙ্ঘন করলে ফেরার পথে যাত্রীদের আটকে দিচ্ছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ২/১ জনকে আসতে দিলেও অধিকাংশ পাসপোর্টযাত্রীদের পাসপোর্টে রিফিউজ সিল মেরে দিচ্ছে। এসব যাত্রীরা পরে আর ভিসা পান না।

বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, আগে প্রতিদিন যেখানে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতো, সেখানে এখন যাত্রীসংখ্যা নেমেছে ১৫-২০ শতাংশে। যাত্রী পারাপার কমেছে ৮৫ শতাংশ।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার সময় ফরিদপুরের পাসপোর্ট যাত্রী শ্যামল কুমার বলেন, তিন তিনবার ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা পাইনি। চতুর্থবার দালালের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভিসা পেয়েছি। এছাড়াও ভিসা অফিসে লেগেছে ১৫০০ টাকা। ভ্রমণকর দিতে হচ্ছে ১০৬০ টাকা। এতো টাকা খরচ করার পর ডাক্তার দেখানো টাকাই থাকছে না।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শাখাওয়াত হোসেন জানান, গত তিন দিনে মোট ৫ হাজার ৩৯২ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে। এর মধ্যে শনিবার ভারতে গেছে ৮৪৭ জন, ফিরেছে ৭৭৯ জন, রোববার গেছে ৯৭৭ জন, ফিরেছে ৮৮০ জন। সোমবার গেছে ১১৩৯ জন, ফিরেছে ৭৭০ জন।

তিনি আরও বলেন, ভিসা বন্ধ, ভিসা প্রদানে জটিলতা ও নতুন নিয়মের কারণে পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত প্রায় ৮৫ শতাংশ কমে এসেছে। এখন যারা যাতায়াত করছেন তারা আগের নেওয়া ভিসায় যাতায়াত করছেন।


মো. জামাল হোসেন/এফএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।