চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে কালিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানাবিধ সমস্যা আর সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে চলছে। নার্স, পিয়ন, ঝাড়ুদার ও ৩য়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিকট চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত হেনস্তা ও অপমানিত হচ্ছেন।
তারা ডিউটি ফাঁকিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ছায়াতলে থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে একের পর এক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চলেছেন। যে কারণে শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড একেবারেই ভেঙে পড়েছে।
অপরদিকে, কর্মচারীদের অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এখানকার বর্তমান চিত্র দেখলে মনে হবে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই যেন বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির রোগে আক্রান্ত।
জানা যায়, গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. প্রকাশ চন্দ্র মজুমদারের নাম ভাঙিয়ে প্রায়ই রোগীদের কাছ থেকে ঝাড়ুদার মায়া রানী রজক অবৈধ ভাবে টাকা আদায় করে থাকনি। এটা জানার পর ডা. প্রকাশ নিষেধ করায় মায়া রানী ওই ডাক্তারকে সম্প্রতি আপত্তিজনক কথাবার্তার এক পর্যায়ে লাঞ্ছিত করেন।
এ ঘটনায় কালিয়া থানায় একটি জিডি হয়। যার নম্বর ৭০৩, তাং-২০-০৭-১৬। কিন্তু পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে (জিডি) প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেন।
এছাড়া কালিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম, শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অপরাধীরা বহাল তবিয়তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাম-রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন।
স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ এসব অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার সবিতা অধিকারী সিনিয়র স্টাফ নার্স আশিষ কুমার দাস ও তার স্ত্রী স্বপ্না রানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করার অপরাধে ইতোমধ্যে তাকে কালিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জেলার লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী করা হয়েছে।
কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দফতরের এক আদেশে আশিষকে ইসিজি বিভাগে ডিউটি দিয়ে তার অপকর্ম ও ডিউটি ফাঁকি দেয়ার কাজে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
২৭ আগস্ট কালিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক, কালিয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাংবাদিক শেখ ফসিয়ার রহমানের মেয়ে তমা খানম (১২) হঠাৎ অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে তার ইসিজি করার প্রয়োজন দেখা দিলে আশিষ কুমার দাসকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার পরিণতিতে তমা খানম বিকেল ৩টার দিকে ইন্তেকাল করে। তমার বাবা ফসিয়ার রহমান ইসিজির দায়িত্বে থাকা আশিষ কুমার দাসের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এছাড়া আশিষ কুমার দাস কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র নার্স হিসেবে চাকরি করাকালীন দীর্ঘদিন লিবিয়ায় অবস্থান করেও সরকারি বেতন-ভাতার টাকা অন্যায়, অবৈধ ও দুর্নীতির মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে বরং এড়িয়ে যান।
অভিযুক্ত আশিষ কুমার দাস বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। আমি সরকারি নিয়মনীতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাপ্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে চলেছি’।
একই প্রসঙ্গে মায়া রানী রজক বলেন, ডাক্তারের সঙ্গে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তা মিমাংশা হয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে এক শ্রেণির লোক মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা সত্য নয়।
এ বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তুষার কুমার পোদ্দার বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান হয়েছে। নিয়ম বহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে কেউ করলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নবাগত ইউএইচএ ডা. প্রভাস কুমার দাশ এ বিষয়ে বলেন, প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দুর করার চেষ্টা করবো।
নড়াইলের নবাগত সিভিল সার্জন ডা. মুনশী মো. ছাদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভিযোগ সংক্রান্ত তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দোষী মায়া রানীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মায়া রানীর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিরস্কার করা হয়েছে। বদলী করা হয়নি। আশিষ কুমার দাস ও স্বপ্না রানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের বিষয় আমি অবগত নই।
এফএ/এমএস