নেত্রকোনায় বাণিজ্য মেলায় লটারি জুয়া
নেত্রকোনায় শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারির নামে চলছে রমরমা জুয়া। বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে দৈনিক প্রভাত সুরমা র্যাফল ড্র নামে প্রতিদিন ছয়টি রঙের ২০ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রি চলছে পৌর শহরসহ এর আশপাশ এলাকায়।
শহরে মাইকিং করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, স্কুল-কলেজের সামনে চলছে টিকিট বিক্রি। প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে বলে ধারণা সচেতন মহলের। টিকিট বিক্রির সময় মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ছোট-বড় পুরস্কারের নাম ঘোষণা করে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে।
এই ঘোষণার খবর শোনার পর থেকেই শহরের ছোট-বড় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষসহ সবাই ২০ টাকা মূল্যের এ টিকিট ক্রয় করে র্যাফল ড্রতে অংশ নিচ্ছেন। কেউ কেউ ছয় রঙের ছয়টি টিকিট ১২০ টাকার প্যাকেজ কিনেও এতে অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ছয় রঙের দুই লাখ ১৪ হাজার ৪৭১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে, যার মূল্য দুই কোটি ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫২০ টাকা।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা নীরব অভিযোগ করে একাধিক ব্যক্তি বলেন, বাণিজ্য মেলা ভালো কিন্তু এমন জুয়া খেলা ঠিক না, সামনে এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে টিভিতে বা মাঠে চলে গিয়ে র্যাফল ড্র দেখে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সঠিক নজরদারি প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, আয়োজকরা র্যাফল ড্র স্থানীয় ক্যাবল টিভি চ্যানেলের মাধ্যমেও প্রচার করছে। ফলে রাত ১০ থেকে র্যাফল ড্র’র ফলাফল দেখার জন্য শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ টিভি চ্যানেলের সামনে বসে থাকে।
রোববার দিবাগত রাত ১০টায় নেত্রকোনা শহরের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ কলেজ মাঠে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় তৃতীয় দিনের মতো র্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রথম পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল পেয়েছে একজন।
জানা গেছে, শহরের পূর্ব প্রান্তে ইসলামপুর মোড় সংলগ্ন চন্দ্রনাথ কলেজ মাঠে গত বুধবার থেকে শরীফ একাদশের আয়োজনে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। মেলার শুরু থেকেই ছয় রকমের সরকারি রাজস্ব বঞ্চিত ২০ টাকা মূল্যের ‘দৈনিক প্রভাত সুরমা র্যাফল ড্র’ নামের লটারির টিকিট মাইকিং করে প্রতিটি পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে বিক্রি করা হচ্ছে। অর্ধশত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে লটারির বাক্সসহ র্যাফল ড্র লটারির টিকিট শহরতলির গণ্ডি ছাড়িয়েও পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। শনিবার রাতে প্রথম বিজয়ীকে মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় বিজয়ীকে ফ্রিজ, তৃতীয় বিজয়ীকে রঙিন টিভিসহ মোট ৭০টি পুরস্কার টিকিটের একাংশ থেকে লটারির মাধ্যমে বাছাই করে প্রদান করা হয়েছে। ফলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব বয়সী মানুষ ২০ টাকার বদৌলতে নিজেদের ভাগ্যে বদলের চেষ্টায় হুমরি খেয়ে টিকিট কিনতে শুরু করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে চন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম রসুল তালুকদার জাগো নিউজকে জানান, সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কলেজের কার্যক্রম চলছে। কলেজ ছুটির পর থেকে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। তবে র্যাফল ড্র খেলার বিষয়টি তার জানা নেই।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মতিন্দ্র সরকার জাগো নিউজকে জানান, লাটারি, রাফেল ড্র যে নামই দেয়া হোক সবই জুয়া খেলা।
পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, শিল্প ও বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে র্যাফল ড্র লটারির বিষয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. মো. মুশফিকুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, লটারির বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
কামাল হোসাইন/আরএআর/জেআইএম