`মা আমি চিটাগাং ট্রলারে উঠতিছি মালোশিয়া যাচ্ছি`


প্রকাশিত: ০৪:১৪ এএম, ১০ মে ২০১৫

দালালের খপ্পরে পড়ে সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী মাগুরা সদর উপজেলার ডেফুলিয়া গ্রামের ৩ যুবক প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ তিন যুবক হচ্ছেন, সদর উপজেলার ডেফুলিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মফিজার শেখের পুত্র ইমরান শেখ (২৩), নূর ইসলামের পুত্র শাহিন বিশ্বাস (২২) ও  দুলাল মোল্লার ছেলে ইমরান মোল্লা (৩০)। মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে ইমরান তার মাকে বলেছিলেন, `মা আমি চিটাগাং ট্রলারে উঠতিছি মালয়েশিয়া যাচ্ছি`।

নিখোঁজ ৩ যুবকের সন্ধানে পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশিদের থাইল্যান্ডে গোপন ক্যাম্পে আটকে অমানবিক নির্যাতন ও হত্যার পর গণ কবরে পুঁতে রাখার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর নিখোঁজ ৩ যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

রোববার সকালে ডেফুলিয়া গ্রামে নিখোঁজ ইমরানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার মা হাসিনা বেগম নিখোঁজ পুত্রের শোকে বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তিনি বিলাপ করে বারবার বলছেন, তুরা আমার ইমরানরে আইনে দে। দালালের খপ্পরে পড়ে আমার বাবা আমারে না কয়ে গোপনে বিদেশে যাচ্ছিল। যাওয়ার পর দিন  আমারে মোবাইল করে কয়ছিল মা আমি চিটাগাং ট্রলারে উঠতিছি মলোশিয়া যাচ্ছি। এরপর থেকে গত ২৭-২৮ দিন ধরে  আর কোন খোঁজ নেই। আমার টাকা-পয়সার দরকার নেই, যে আমার বাবারে আনে দেবে তারে ঘর-বাড়ি সব দিয়ে দেব।` শুধু ইমরানের মা নয়, ভাই-বোন, দাদী, নানী, বাড়িতে আসা আত্মীয়স্বজন সবাই ইমরানের খোঁজে কান্নায় বিলাপ করছেন।

ইমরানের ছোট ভাই রাজু শেখ জাগো নিউজকে জানান, ইমরান পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। ২৬ দিন আগে পাশ্ববর্তী জেলা নড়াইলে কাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর ওই দিনই ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর বাড়ি রাজ্জাক পরিচয়দানকারী এক দালালের মাধ্যমে গোপনে তার ভাই ইমরানসহ মামাতো ভাই শাহিন ও প্রতিবেশি ইমরান নামে অপর এক বড় ভাই চিটাগাং যান পরদিন মোবাইলে জানান, তারা ৩ জন সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। এ কথা বলার পর দালালরা তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে নেন। এরপর থেকে তাদের আর কোন খোঁজ নেই। গত ক`দিন ধরে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাদের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করা হলে রাজ্জাক পরিচয়দানকারী দালাল প্রথমে জানান, তাদের চিটাগাংয়ের দালালের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। যে কারণে তারা কোথায় আছে সে খবর তিনি জানেন না। পরে বিভিন্ন সময় ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কখনও জানান, বর্তমানে তারা সমুদ্রের মধ্যে আছেন। আবার কখনও বলেন, তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য থাইল্যান্ডে গোপন গুহায় রাখা হয়েছে। সর্বশেষ তিনি বলেছেন, তারা না খেয়ে আছেন, তাদের খাওয়ার জন্য টাকা লাগবে। জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠান। বর্তমানে তিনি ওই মোবাইল নম্বর বন্ধ করে রেখেছেন।

শুধু ইমরান নয়, শাহিন ও অপর যুবক ইমরানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা। তাদের বাড়িতেও চলছে কান্নার রোল আর শোকের মাতম। তবে শাহিন ও ইমরানের পরিবারের সদস্যরা জানান, এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হোক সেটা তারা চান না। যে কারণে সাংবাদিকদের সঙ্গে তারা কথা বলতে চান না। যদি শাহিন, ইমরান বেঁচেও থাকেন তবে এ বিষয়ে খবর প্রচারিত হলে তারা তাদের হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দেবেন বলে  কারা যেন তাদের বলে গেছেন।

তবে এলাকার বয়বৃদ্ধ ব্যক্তি দলিল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, দালালের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে ৩ যুবকই ভুল করেছে। তবে সরকারের প্রতি আহ্বান তাদের সঠিক অবস্থান খুঁজে বের করা হোক।

এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবাসি কল্যাণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মো. নাকিব হাসান তরফদার জাগো নিউজকে জানান, মালয়েশিয়াগামী ডেফুলিয়া গ্রামের নিখোঁজ ৩ যুবকের ব্যাপারে কেউ তাদের অবহিত করেননি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ পরিবারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।

আরাফাত হোসেন/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।