ঝিনাইদহে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাচারের শিকার শতাধিক পরিবার


প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ১৮ মে ২০১৫

ঝিনাইদহে মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে পানি পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া উদ্দেশ্যে যাত্রা করা শতাধিক পরিবারে চলছে স্বজনদের আহাজারি আর শোকের মাতম। সন্তানরা কোথায় আছেন, জীবিত নাকি মৃত তা জানেন না পরিবারের সদস্যরা। ফলে শোকে পাথর হয়ে কান্নার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে।

জানা গেছে, জেলার ৬ উপজেলায় কমপক্ষে শতাধিক যুবক দালালদের খপ্পড়ে পড়ে অবৈধপথে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন। মাস, বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও খোঁজ মেলেনি তাদের। মানব পাচারের মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এলাকার অবৈধ অনেক মানবপাচারকারীরা এখন প্রশাসনের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট অভিযোগের অভাবে তাদেরকে আটক করতে পারছে না পুলিশ।

নিখোঁজদের স্বজনরা ও পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার শতাধিক যুবক নিজের ভাগ্যকে গড়ার জন্য দালালদের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে পানি পথে মালোয়েশিয়া যাত্রা করেন। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এসব বিদেশগামী যুবকদের পরিবারের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। তারা বর্তমানে কোথায় কী অবস্থায় আছেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকার মাধ্যমে পানি পথে মালোয়েশিয়া গমনকারীদের করুণ দৃশ্য দেখে এই পরিবারগুলোতে চলছে এখন শোকের মাতম।
 
জেলার সদর উপজেলার গাড়ামাড়া গ্রামের লাল চান, নাজমুল হোসেন, মাসুদ রানা, আলমগীর হোসেন, ওলিয়ার রহমান, ফরিদ হোসেন, রিপন আলী, বাক্কা আলী নামের এই ৮ জন যুবক একই গ্রামের মানব পাচারকারী হাসান সাহেব, আতিয়ার রহমান ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম রাজ নগরের মোফাজ্জেল হোসেন, বেড়াশুলা গ্রামের নুরুল হোসেন মাধ্যমে এবং সদর উপজেলার হিরাডাঙ্গা-সুরোপাড়া গ্রামের দিনমজুর হাসান আলী ও ছাত্র রকিব একই গ্রামের মানবপাচারকারী হারুন শাহ এর মাধ্যমে প্রত্যেকে ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে পানি পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন।

এছাড়া সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের জগত আলী, হামিদ হোসেন, সোনারদাড়ি গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও ডেপোলবাড়িয়া গ্রামের শামসুল ও বিল­াল পানি পথে বিদেশ যাওয়ার পথে একই ভাবে নিখোঁজ হন। এ দিকে হরিনাকুণ্ডু উপজেলার মকিমপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম একইভাবে বিদেশ যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন।  

মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। এখন নিখোঁজ সন্তানদের খোঁজে তারা দিশেহারা। কান্নার ভাষাও যেন তারা হারিয়ে ফেলেছেন। জানেন না ফরিদ, রিপন, হাসান ও রাকিবের মত শতাধিক যুবক আদৌ জীবিত, নাকি মৃত। তারা  নিজ সন্তান ও স্বামীকে ফিরে পেতে চান এবং জড়িত মানবপাচারকারীদের দ্রুত আটক করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন আরও জানান,  জেলা থেকে পানি পথে দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রায় শতাধিক যুবক মালোয়েশিয়া পাচার হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হয়েছি। চলতি বছরে সদর থানায় মানব পাচারের দুটি মামলায় মানব পাচারকারী আতিয়ার রহমানসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অবৈধভাবে যারা মানব পাচারের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।      

এদিকে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী গত বুধবার বিকালে উপজেলার হিরেডাঙ্গা গ্রামের তোফাজ্জেল শাহয়ের ছেলে হারুন শাহকে আটক করে র্যাবকে খবর দেন। খবর পেয়ে র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই হারুনের সহযোগী খায়রুল, ইমদাদুল ও  মাজেদুল ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলাকাবাসীর উপর হামলা চালিয়ে হারুনকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।

উল্লেখিত মানবপাচারকারীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সহযোগিদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এ ধরনের মানব পাচার করে আসছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে অভিযুক্ত  মানবপাচারকারীদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।