হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর সিল্ক!


প্রকাশিত: ০২:৪৮ এএম, ২৮ মে ২০১৫

সুতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক। শুধু তাই নয়, রেশম সুতার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তি মালিকানার রেশম কারখানা। বর্তমানে যে কয়টি কারখানা চালু আছে সেগুলোও বিশ্ব বাজারে রেশম সুতার মূল্য বাড়ার কারণে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের একমাত্র রেশম নগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকায় গত দু’বছর আগেও ছোট-বড় মিলিয়ে ৭২ টি রেশম কারখানা ছিল। এর মধ্যে অর্ধ-শতাধিক কারাখানা রেশম সুতার অভাবে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কারখানার মধ্যে আরো কয়েকটি বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ রেশম বোর্ড যে পরিমাণ রেশম সুতা উৎপাদন করে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলে রাজশাহীর রেশম ব্যবসায়ীরা জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কাজাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রেশম সুতা আমদানি করে চাহিদা পূরণ করছেন। কিন্তু বেশির ভাগ দেশ রেশম সুতা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে চীনও বস্ত্রখাতের উন্নতিতে নজর দেয়ায় এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চীনের রেশম সুতা আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

সরকার রেশম বোর্ডের সহযোগিতায় ২৩ টি রেশম পল্লির মাধ্যমে সুতা সংগ্রহ, কুপন তৈরি ও সুতা উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করেছিলো। তবে কবে নাগাদ সরকারের এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে অনেক ব্যবসায়ীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

তবে, বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি প্রয়োগ, চাষি পর্যায়ে গুটি বিক্রির সুযোগ দিলে আগামী দু’বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা মতো সুতা উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, দেশীয় রেশম চাষিরা সুযোগ-সুবিধার অভাবে রেশম গুটি উৎপাদন করতে পারছেন না। কারণ হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা অপর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা ও সরকারের অবহেলাকেই দায়ী করেন। রাজশাহী রেশম বোর্ডের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও রেশমের সমস্যাগুলোর সত্যতা স্বীকার করেছেন।

তারা জানান, রেশমের গুটি ও সুতার অভাবে ব্যক্তি মালিকানার কারখানা বন্ধে রেশম কাপড়ের উৎপাদন হুমকির মুখে রয়েছে। তবে রেশম বোর্ড ও সরকার বিরাজমান সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে। শিগগিরই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন।

এ ব্যাপারে রাজশাহীর সপুরা সিল্ক মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সদর আলী জানান, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত প্রতি কেজি রেশম সুতা সাড়ে ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার অধিক দামে কিনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতি কেজি দেশীয় সুতার দাম সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। অথচ অবাধে চোরাই পথে সুতা আমদানির কারণে দেশীয় রেশম সুতার বাজার এখন ধ্বংসের মুখে।

বিষয়গুলো নিয়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজ এর সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাজশাহী রেশম শিল্প নগরী। এই শিল্পকে বাচাঁতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সুতা উৎপাদনের উদ্যোগে নিতে হবে। সুতার উৎপাদন বাড়াতে  প্রযুক্তির প্রয়োগ, চাষি পর্যায়ে গুটি বিক্রি ও ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। রেশম সুতা আমদানি নির্ভর হয়ে বসে থাকলে এই শিল্প হুমকির মুখেই পড়ে থাকবে। তাই রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পকে বাঁচাতে তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।