মাগুরায় ২০ কোটি টাকার সরকারি চাল আটকে দিয়েছে জেলা প্রশাসন
মাগুরায় প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন জিআর'র চাল আটকে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ১ হাজার ৬০৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে মাগুরার চার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ওয়াজ মাহফিল ও নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান দেখিয়ে এসব বরাদ্দ দেয়া হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে। কিন্তু ভুয়া কাগজ পত্রাদি তৈরি ও নয়ছয়ের মাধ্যমে বরাদ্দের তালিকায় নাম ওঠানোয় জেলা প্রশাসন তদন্ত সাপক্ষে বরাদ্দ ছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তালিকায় দেখা যায়, চলতি বছরের জুন মাসের শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর এ চার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা, মসজিদ, ধর্মীয় ও সামাজিক সামনে ওয়াজ মাহফিল ও নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে। কিন্তু গত বছর তার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। স্ব-স্ব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা তদন্ত শেষে এই ভুয়া তালিকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
নতুন বাজারের আসুর বাড়ির সামনে, হাসপাতাল পাড়ার খলিল, পারলা দক্ষিণ পাড়া খেলা মাঠসহ মাগুরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখানো হয়েছে ওয়াজ মাহফিল। এছাড়া শ্রীপুর, মাহম্মদপুর, শালিখা ও মাগুরা সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখানো ওয়াজ মাফিল ও নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে একই জালিয়াতি ধরা পড়েছে। অধিকাংশ বরাদ্দে একই পাড়ায় বিভিন মন্দির, মসজিদ, গীর্জাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে ৫-৬টি ওয়াজ মাহফিল ও নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের নামে বরাদ্দ আনা হয়েছে।
মাগুরা শহরের কলেজ পাড়ায় আবু রেজা ও নান্টু নামে দুই জন ব্যক্তির বাড়ির সামনে ওয়াজ মাহফিলের বিপরীতে ৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ওই নামে একজন ব্যক্তি কলেজ পাড়ায় বসবাস করলেও তার বাড়ির সামনে ওয়াজ মাহফিল করার মত পর্যাপ্ত যায়গা নাই। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। অপরদিকে আবু রেজা নান্টুও সাফ জানিয়ে দেন তার পাড়ায় কোনো ওয়াজ মাহফিল হয়নি।
এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক আজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে ১২টি স্মারকে ১ হাজার ৬৮০ প্রকল্পের বিপরীতে মোট ৪ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩২টি প্রকল্প। বাকি সবগুলোই প্রাথমিক তদন্তে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ভুয়া বরাদ্দের ব্যাপারে স্থানীয় এমপিদের কোনো সংশ্লিষ্ঠতা আছে কিনা? এমন প্রশ্নের ব্যাপারে অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক অজমুল হক জানান, এটি বিশেষ বরাদ্দ হওয়ায় এমপি মন্ত্রীদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি থাকে না।
এ ব্যাপারে মাগুরা-২ আসনের এমপি যুব ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. বীরেন শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনিও এ ধরনের প্রকল্পে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা বা সুপারিশ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন।
তবে তিনি শুনেছেন, কেউ-কেউ জালিয়াতি ও নয়ছয়ের সুযোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি বিষয়টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল অব: এটি এম আব্দুল ওয়াহাব বলেন, এ ধরনের প্রকল্পর সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। তিনি এধরনের বরাদ্দের জন্য কোনো ডিও স্বাক্ষর করেননি।
তবে তিনি জানতে পেরেছেন, জেলার একটি অসাধু চক্র ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে জিআর'র বরাদ্দের চাল নিয়ে এসেছেন।
আরাফাত হোসেন/এফএ/এমএস