পাহাড়ধস : ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন অনিশ্চিত
গত ১৩ জুন পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিয়ে বিপাকে প্রশাসন। এ নিয়ে আড়াই মাস পরও সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। খুঁজে পাওয়া যায়নি পুনর্বাসনের জন্য উপযুক্ত জায়গা।
এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে আশ্রয় কেন্দ্র চালানোর সরকারি বরাদ্দ। এ অবস্থায় পুনর্বাসন অনিশ্চিত। তবু বরাদ্দ শেষ হওয়াতে বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিতে হচ্ছে রাঙ্গামাটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।
এদিকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে এ মুহূর্তে কোথায় যাবে বা কোথায় গিয়ে কীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেবে- তা নিয়ে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্তরা।
জেলা প্রশাসন বলছে, এই অবস্থায় আশ্রয় কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। তাই ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। তবে বরাদ্দ পাওয়া গেলে বহাল রাখা যাবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। উপযুক্ত জায়গাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গত ১৩ জুন ভূমিধসের ঘটনায় প্রশাসনের নিরূপণ করা তালিকায় শহরসহ রাঙ্গামাটিতে সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১৮০০। প্রাণহানি ঘটে ১২০ জনের। শহরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ৩১৩ পরিবারকে সরকারি পুনর্বাসন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বর্তমানে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছেন, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে ২৬৫ জন, জিমনেসিয়াম হলে ১১২ জন, রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০৮ জন, মোনঘর ভাবনা কেন্দ্রে ২১০ জন, রাঙ্গামাটি স্টেডিয়াম হল রুমে ৭৪ এবং তবলছড়ি এনডিসি হিল কোয়ার্টারে ১৪ জন। ১৩ জুন থেকে এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র চালাতে খরচ গেছে প্রায় সোয়া কোটি টাকা এবং ৮২ টন চাল।
জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, ১৩ জুনের ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় শহরে খোলা ১৯ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমানে চালু রাখা হয়েছে ৬টি। এসব কেন্দ্রে অবস্থান করছে ৩১৩ পরিবারের প্রায় ৮ শতাধিক মানুষ- যারা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভিটাবাড়ি হারা।
এসব পরিবারকে সরকারিভাবে পুনর্বাসনের জন্য প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তাদের পুনর্বাসনে উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে একটি কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু জায়গা খোঁজা হলেও এখনও পাওয়া যায়নি।
এছাড়া পুনর্বাসনের প্রস্তাবনা সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হলেও এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। সিদ্ধান্ত এলে এবং জায়গা খুঁজে পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর করে দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এরই মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র চালানোর জন্য সরকারি বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের জরুরি ত্রাণ তহবিল হতে কেন্দ্রগুলো চালানো হচ্ছে। তাও শেষ হয়ে আসছে।
এই অবস্থায় আশ্রয় কেন্দ্র চালানো আর সম্ভব নয়। তবে বরাদ্দের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে চালু রাখা যাবে। অন্যথায় ঈদুল আজহার পরেই আশ্রয় কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে।
এ জন্য যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তাদেরকে যার যে সুবিধা মতো নিরাপদে কোথাও চলে যেতে বা ভাড়া বাসা খুঁজে নিতে বলা হয়েছে। যাওয়ার সময় কেন্দ্র অবস্থান করা ৩১৩ পরিবারের প্রত্যেককে ত্রাণের ২ বান্ডেল ঢেউ টিন, নগদ ৬ হাজার টাকা এবং ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদের দিন উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।
এদিকে, পরিবার পরিজনসহ নিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে গাদাগাদি করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। কিন্তু সরকারি পুনর্বাসন ছাড়াই প্রশাসন থেকে হঠাৎ আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে বলায় কোথায় যাবেন, কী করবেন তা নিয়ে কিছুই বুঝতে পারছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা চান সরকারি পুনর্বাসন এবং তার নিশ্চয়তা। তার আগে কেউ আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে চান না।
কেন্দ্রে অবস্থান করা ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, আমরা সব হারিয়েছে। আমাদের এখন তো আর কিছুই নেই। যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু করে নেয়ার কোনো অবস্থা নেই। এ মুহূর্তে কোথায় যাব, কী করব কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।
সুশীল চাকমা/এএম/আইআই