সড়কে কপাল পুড়ছে কৃষকদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৭:২২ এএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭

আশ্রব আলীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাদুঘর গ্রামে। সত্তরোর্ধ এ কৃষকের ১৮ জনের সংসার চলে কৃষি জমির আয় দিয়ে। ভাদুঘর মৌজার টেহারখোলা এলাকার দুই একর ৯০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। প্রতি মৌসুমে ১৬০ মণ ধান হয় তার এসব জমিতে। ধানই তার আয়ের একমাত্র উৎস। তবে সামনের মৌসুমে আর জমিতে ধান চাষ করতে পারবেন না তিনি। কেননা তার সবটুকু জমিই এখন খালে পরিণত হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে বিজয়নগর উপজেলা পর্যন্ত ‘সীমনা-বি.বাড়িয়া’ সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য আশ্রব আলীর জমিতে বেকু মেশিন দিয়ে খুঁড়ে মাটি তোলা হচ্ছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কৃষক আশ্রব আলী বলেন, ‘এই জমি ছাড়া আমার কোনো সম্বল নেই। এ জমিই আমি ও আমার পরিবারের জীবন-জীবিকা। কথাবার্তা ছাড়াই আমার জমি খুঁড়ে মাটি তোলা হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে ঠিকাদার বলছে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেবে। মাটি খোঁড়ার কারণে জমি এখন খাল হয়ে গেছে, খালে তো আর চাষাবাদ করা যাবে না। এখন আমার ভিক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই’।

b bariya

ভাদুঘর গ্রামের আরেক কৃষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘৫১ শতক জমি ছিল আমার। মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে এখন একটুখানি বাকি আছে। এই একটুখানি থাকা না থাকা সমান। পরিবার নিয়ে এখন কিভাবে চলব?’

জমি অধিগ্রহণ বা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আশ্রব আলী ও আবদুল কুদ্দুসের মতো আরও বেশ কয়েকজন কৃষকের জমি খুঁড়ে মাটি তোলা হচ্ছে সীমনা-বি.বাড়িয়া সড়কের জন্য। এতে করে কপাল পুড়ছে এসব কৃষকদের।

কৃষকদের অভিযোগ, মৌজা ম্যাপ অনুসারে সড়ক অন্যদিক দিয়ে। কিন্তু ঠিকাদার তার সুবিধার্থে জমির উপর দিয়েই সড়ক বানাচ্ছে, আবার জমিও কাটছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এরপর আদালতে একটি মামলাও করেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন অংশে ৬/৭টি বেকু মেশিন দিয়ে জমি খুঁড়ে মাটি তোলা হচ্ছে। গত ২৫ নভেম্বর থেকে মাটি তোলার কাজ শুরু হয়। এরপরই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষ থেকে ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। ৩০ নভেম্বর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

b bariya

মামলায় ঠিকাদার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালককে আসামি করা হয়। আদালত তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সীমনা-বি.বাড়িয়া নামের প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির কাজ শুরু হয়েছে ১৩ মাস আগে। কাগজে-কলমে সড়ক নির্মাণের কাজ ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ডলি কনস্ট্রাকশন’ পেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় একাধিক ঠিকাদারই মূলত কাজ করছেন।

৩৯ কোটি টাকার এই কাজের মধ্যে মাটির কাজের জন্যে বরাদ্দ ৬ কোটি টাকা। ঠিকাদারেরই মাটির সংস্থান করার কথা রয়েছে। চুক্তিতে কোথাও বলা নেই সড়কের পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিতে হবে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, সড়কের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই মাটির ব্যবস্থা করবে। ঠিকাদার কোত্থেকে মাটি আনবেন সেটি তার ব্যাপার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম-ফোন নম্বর চাইলে কোনো কিছু জানা নেই বলে জানান আবদুর রাজ্জাক।

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।