কাজে আসছে না দুই এনিমেল কোয়ারেন্টাইন স্টেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৯:৫৭ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিদিনই প্রবেশ করছে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় গবাদিপশু। কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই প্রবেশে বাড়ছে মহামারির ঝুঁকি। তাই সীমান্ত পেরিয়ে আসা গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও রহনপুর রেলবন্দর এলাকায় দুটি এনিমেল কোয়ারেন্টাইন স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু লোকবল না থাকায় বন্ধ পড়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।

গবাদিপশু প্রবেশের অন্যতম ট্রানজিট রাজশাহীতেও নেই কোয়ারেন্টাইন স্টেশন। কার্যক্রম নেই রাজশাহী প্রাণীসম্পদ দফতরেরও। বার বার তাগিদ দিয়েও প্রাণীসম্পদ দফতরের সাড়া পায়নি বিজিবি।

রাজশাহীর অতিরিক্ত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক গবাদিপশু আসছে এটি তারা জানেন। কিন্তু পশুগুলো কিভাবে প্রবেশ করছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ছাড়পত্র দিচ্ছে কিনা তা তারা জানেন না। এনিয়ে প্রাণীসম্পদ দফতরকে বিজিবিও জানায়নি।

তবে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার এ দাবি দায় সারা বলে জানিয়েছেন রাজশাহী-১ বিজির অধিনায়ক লে. কর্নেল শামীম মাসুদ আল ইফতেখার। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে প্রাণীসম্পদ দফতরের কোনো কার্যক্রম নেই এখানে। বিষয়টি উদ্বেগজনক হওয়ায় বরাবরই বিজিবি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দিয়ে আসছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া দেশে গবাদিপশুর প্রবেশে উদ্বেগ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৯ বিজিবিও। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরকে পত্র দিয়েছে বিজিবি।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, বিজিবির পত্রের প্রেক্ষিতে গত বছরের ৩ অক্টোবর তারা মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠিয়ে নির্দেশনা চেয়েছেন। কিন্তু এখনো এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে প্রাণীসম্পদ দফতর।

তিনি আরো বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য সনদ ছাড়ায় সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু প্রবেশ করছে। স্বাস্থ্য সনদ ছাড়ায় সেগুলো নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করে দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সীমান্তের বিট/খাটালগুলোতে সেই পরিস্থিতিও নেই। তারপরও মন্ত্রাণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় তারা।

বন্ধ পড়ে থাকা জেলার দুই কোয়ারেন্টাইন স্টেশন চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্টেশন দুটি নির্মাণ করা হয়েছে একটি প্রকল্পের আওতায়। অবকাঠামো নির্মাণের পর শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাকে স্টেশন দুটির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো আর চালু করা যায়নি। জরুরি জনবল নিয়োগে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র লিখেন তৎকালীন প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা। কিন্তু এখনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। বন্দর এলাকায় হওয়ায় এ দুটি কোয়ারেন্টাইন স্টেশনে ভারতীয় গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, প্রাণীরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুটি কোয়ারেন্টাইন স্টেশন নির্মাণ করা হয়। দেশের বাইরে থেকে ভেতরে পশু ও পশুজাত পণ্যের মাধ্যমে রোগ প্রবেশ রোধ, রোগ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করে গবাদিপশু পালন লাভজনক করার মাধ্যমে খামারিদের উৎসাহ দেয়া ছিলো এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান ছিল এ প্রকল্প।

প্রাণীসম্পদ দফতর জানিয়েছে, প্রতিটি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে দশমিক ২০০ একর জমির উপর। অফিস ভবন, আইসোলেশন সেড, সিমানা প্রাচীর ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা রয়েছে প্রতিটিতেই। ইপিডিমিওলজি ইউনিটের মাধ্যমে ডিজিস ডাটাবেজ সফ্টওয়্যার তৈরি ও ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব খাতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর আর কার্যক্রম এগুয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে যে গরু বাংলাদেশে পাচার হয়, সেগুলি প্রায় সবই আসে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলো থেকে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে আসতে হলে তাদের অন্তত তিন-চারটি রাজ্যের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়। ক্লান্তিকর দীর্ঘ যাত্রার ধকল দুর্বল করে ফেলে গরুগুলোকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এনিমেল হাজবেন্ড্রী অ্যান্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. খন্দকার মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, ক্ষুরা রোগের ভাইরাসটি অতি-সংক্রামক বলে রোগটি দ্রুত ছড়ায়। ভাইরাস (ক্ষুরা রোগ) সংক্রমিত এলাকা থেকে বহির্দেশে পশুজাত পণ্য রফতানি করা যায় না। এনিয়ে ওআইই (ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর এনিমেল হেলথ) এবং ফাও (খাদ্য ও কৃষি সংস্থা) এর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বাংলাদেশের পশুখাতে অন্যতম সীমাবদ্ধতা হলো গরুর ক্ষুরা রোগ। পার্শ্ববর্তী দেশ বিশেষ করে ভারত, মায়ানমার, নেপাল ও ভূটান থেকে ক্ষুরা-রোগের বিভিন্ন ভাইরাস বাংলাদেশে এসে ঢুকছে। দীর্ঘ যাত্রায় দুর্বল গবাদিপশুগুলো সহজেই ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের ক্ষুরা-রোগের ভাইরাসের একটি সংমিশ্রণ আধার হিসেবে কাজ করছে। ফলে সার্বিকভাবে ক্ষুরা রোগ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া তড়কার মত জুওনোটিক রোগ ছড়াচ্ছে। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমিত হচ্ছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।