পল্লী বিদ্যুতের ভৌতিক বিলে দিশেহারা গ্রাহকরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১১:৩৮ এএম, ১০ জুলাই ২০১৯

জয়পুরহাটে পল্লীবিদ্যুতের ভৌতিক বিলে দিশেহারা গ্রাহকরা। মিটারে উল্লেখিত রিডিংয়ের চেয়েও বেশি ইউনিটের বিল করায় রীতিমত ফুঁসে উঠেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বর্তমানে সংযোগ ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় গ্রাহকরা সন্তুষ্ট থাকলেও অগ্রিম বিলের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, ১২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ১০টি সাব-স্টেশনের মাধ্যমে বর্তমানে তাদের আওতায় রয়েছেন জেলার প্রায় আড়াই লাখ গ্রাহক। এরমধ্যে শতকরা প্রায় ৯২ ভাগ আবাসিক গ্রাহক, বাকি শিল্প বা বাণিজ্যিক গ্রাহক। ৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে তার কাছাকাছিই।

এমন সন্তোষজনক পরিবেশের মধ্যে গত মে ও জুন মাসের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ পেয়ে বিস্মিত গ্রাহকরা। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বিল আসায় চরম ভোগান্তিতে পরেছেন স্বল্প আয়ের মানুষ ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো।

পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মচারীরা যে রিডিং নম্বর উল্লেখ করে বিল করেছেন প্রকৃত রিডিং তার চেয়ে অনেক কম। এ রকম দুর্ভোগ তাদের আগে কখনও পোহাতে হয়নি। এ ঘটনায় যেসব গ্রাহক অফিসে এসে অভিযোগ করছেন তাদের বিল সংশোধন করে দেয়া হচ্ছে। আবার অনেকেই ঝামালা এড়াতে অতিরিক্ত বিলই পরিশোধ করছেন।

দোগাছী ইউনিয়নের বিল্লাহ্ এলাকার সামছুল আলমের ফ্রিজ, ৪টি ফ্যান ও ৪টি বাতির জন্য আগে বিল আসত ৪০০ টাকা। অথচ গত মে মাসে তার বিল এসেছে ৫৬২ টাকা।

বম্বু ইউনিয়নের কোমরগ্রামের মোকাব্বর মণ্ডলের দুটি ফ্যান ও চারটি বাতিতে আগে বিল আসত ৩৫০-৪০০ টাকা, অথচ মে মাসে তার বিল এসেছে ৭৫৭ টাকা, সদর উপজেলার বানিয়াপাড়ার আলমের মিটারে জুন মাসে রিডিং আছে ৬৭২ ইউনিট, কিন্ত বিদ্যুৎ বিলের রিডিংয়ে অতিরিক্ত ১২৩ ইউনিট যোগ করে ৭৯৫ ইউনিটের বিল করা হয়েছে। একইভাবে বম্বু বানিয়াপাড়ার মিটারে ৩৮১৪ ইউনিট থাকলেও বিল করা হয়েছে ৪০২৫ ইউনিটের। একই এলাকার রাজ্জাকের মিটারে ২১০১৪ ইউনিট থাকলেও বিল করা হয়েছে ২১৮০৫ ইউনিটের। ধারকী রমিদারপাড়ার ফেরদাউছুর রহমান গত ১ বছর ধরে কখনও ১৫০ টাকার বেশি ল দেননি। অথচ গত দুই মাস যাবত তার বিল এসেছে ৬০৮ টাকা।

পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে দোগাছীর বিল্লাহ্ এলাকার সামছুল আলম, কোমরগ্রামের মোকাব্বর মন্ডল, বানিয়াপাড়ার আলম, রাজ্জাক, দুলাল হোসেন, বানিয়াপাড়ার ভ্যানচালক বজলুর রহমান, বানিয়াপাড়া ওয়াক্তিয়া মসজিদ কমিটির সদস্য তানভির হোসেন, ধারকী রমিদার পাড়ার ফাতেমাসহ একাধিক গ্রাহক জানান, মিটার রিডাররা মিটার না দেখে বিল করেছে, যারা অফিসে এসে অভিযোগ করছে তাদের বিলের কাগজ রেখে সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গ্রাহক জানান, পল্লীবিদ্যুতের লোকসানের ঘাটতি পূরণ করতে জুন মাসে গ্রাহকদের উপর এই অতিরিক্ত বিল চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রাহক অভিযোগ করছে তার সংশোধন হচ্ছে, কেউ কেউ অভিযোগ না করে বিল প্রদান করছে এতে করে এখান থেকে লোকসানের ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার রবিউল হক বলেন, আড়াই লাখ গ্রাহকের বিপরীতে তাদে ১২০ জন মিটার রিডার রয়েছে তারা বিল দেয়/বিল পৌঁছায়, মিটার রিডিং করে ফলে তাদের কিছু গাফিলতির কারণে ছোট খাট ভূল-ত্রুটি হতে পারে তবে আমাদের কাছে আসলে আমরা সন্মানের সাঙ্গে তাদের বিল সংশোধন করে দেব।

শতভাগ সংযোগ হলেও বিদ্যুৎ নিয়ে আর কোনো ভোগান্তি চান না সাধারণ মানুষ। তাই শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের মত শতভাগ হয়রানিমুক্ত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীর।

রাশেদুজ্জামান/এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।