রানীনগরে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ধুম

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৮:৪৮ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

শুরু হয়েছে ইট তৈরির মৌসুম। নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। নির্বিচারে আবাদি জমি থেকে মাটি কাটার ধুম পড়লেও যেন দেখার কেউ নেই। যে যেখান থেকে পারছে স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। জমির উপরের অংশ অর্থ্যাৎ টপ সয়েল ইট ভাটায় যাওয়ায় জমির ঊর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ।

নষ্ট হচ্ছে মাঠে মাঠে জমির উর্বর শক্তি আর জীববৈচিত্র। বর্ষাকালে উম্মুক্ত ধানী জমিগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলেও সেখানে রোপা-আমন ও উঁচু জমিতে ইরি-বোরো ধান হয় বছরজুড়ে। নিম্নাঞ্চলের জলরাশিতে পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির নানা রকমের সুস্বাদু মাছ। এ জনপদের মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাাছের লোভে নানা প্রজাতির পাখি এসে বিচরণ করতো। ইট ভাটার মালিকদের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার আগ্রাসী মনোভাবের কারণে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

রানীনগর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। শ্রেণি ভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ধরনের ফসল চাষ করে কৃষকরা। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় স্থানীয় এক শ্রেণির কৃষকরা ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারে কোনো খরচ ছাড়াই প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) মাটি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রয় করায় এক ফুট গর্ত করে প্রতি বিঘায় প্রায় ১৮ হাজার টাকার মাটি বিক্রয় করছে কৃষকরা। ফলে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে আবাদি কৃষি জমি থেকে মাটি খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি অন্য দিকে ঊর্বর শক্তি কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন হ্রাস পাওয়াসহ সৃষ্ট হচ্ছে ছোট-বড় স্থায়ী জলবদ্ধতা।

Naogaon-Land1

উপজেলার আতাইকুলা ¯স্লুইজগেট, কাশিমপুর, মিরাট, ধনপাড়া, নগর বালুর ঠিকি, রামরায়পুর, মন্ডলেরপুল, খট্টেশ্বর হাদিপাড়া এলাকায় কৃষি জমি থেকে অবাধে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। মাটি কাটার প্রভাবে আগামী ইরি-বোরো মৌসুমে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও শুধু ইট ভাটায় কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রয় করার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪শ হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষ কম হবে বলে এমনটাই বলছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

ইটভাটার মালিকরা বলছেন, নদী ও পরিত্যক্ত স্থানের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করা হয়। তবে নদীর মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি থাকায় ইট ভালো হয় না। এ মাটির সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ফসলি জমির মাটি মিশিয়ে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।

রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ফলে জমির উপরিভাগের মাটিতে (টপ সয়েল) যে জীপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে তা অনুজীবের কার্যাবলি সীমিত হয়ে যায়। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। ঊর্বর শক্তি কমে যাওয়ার ফলে এ জমিতে আর আশানুরুপ ফলন হবে না। এক পর্যায়ে এ জমিগুলোতে ফসল কম হওয়ার কারণে চাষিদের আগ্রহ কমে যাবে তাই যত তাড়াতাদি সম্ভব এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে সার্বিক উৎপাদনে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

রানীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল-মামুন বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র নেয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলো তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আব্বাস আলী/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।