নতুন বই দিতে ৭০০ টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২০

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার হাটুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের নতুন বই বিতরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। টাকা না দেয়ায় নির্ধারিত সময়ের পর প্রায় ৫৪৪ জন শিক্ষার্থী বই পেয়েছে।

তবে প্রধান শিক্ষকের দাবি- রসিদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ ৭০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। পরে তাদের নতুন বই দেয়া হয়েছে। বইয়ের জন্য কোনো টাকা নেয়া হয়নি।

এদিকে খবর পেয়ে বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে এলাকাবাসী এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জড়ো হয়েছেন। গত ১ জানুয়ারি বই পেয়েছে মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে, প্রধান শিক্ষক ৭০০ টাকা করে নিয়ে নতুন বই দিয়েছেন। কোনো রশিদ দেননি। তারা প্রথম দিন বই নিতে গেলে টাকা না দেয়ায় তাদের বই দেয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নলমুড়ি ইউনিয়নের ভ্যানচালক মোহাম্মদ সফি (৫০) এবং মনির হোসেন বেপারী (৩৫), প্রশান্ন কুমার দাস (৪০), হুমায়ূন আহাম্মেদ (২৭) অভিযোগ করেন, সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ১ জানুয়ারি নতুন বই পেয়ে আনন্দ করল আর হাটুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের জন্য এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলো। সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ (রতন) টাকা ছাড়া বই দিচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক মোবাইল ফোনে বলেন, প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে ভর্তি ও সেশন ফির টাকা আদায় করার পর নতুন বই বিতরণ করছেন। আমরা প্রধান শিক্ষকের কাছে জিম্মি । সব দেখেও কিছু বলতে পারি না।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ (রতন) বলেন, আমি রসিদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি এবং সেশন চার্জ বাবদ ৭০০ টাকা নিয়েছি। নতুন বইয়ের জন্য কোনো টাকা নিইনি। বই উৎসব পালন করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই দিয়েছি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সদস্য মো. আজাহার হোসেন সরদার অভিযোগ করে বলেন, আমার নাতিকে ভর্তি করতে যাই স্কুলে। এক শিক্ষক আমাকে বলেন, প্রধান শিক্ষক বলেছেন ৭০০ টাকা নিয়ে রসিদ দিতে। পরে দফতরির কাছ থেকে বই নেবেন। সারাদেশে ১ জানুয়ারি একযোগে প্রতিটি স্কুলে বিনামূল্যে সরকার বই দিচ্ছে। কিন্তু হাটুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ব্যতিক্রম। তারা টাকার বিনিময়ে বই দিচ্ছে। এতে করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. এমারত হোসেন মিয়া বলেন, সরকারি বই বিতরণ নীতিমালা অনুযায়ী বিতরণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো রকম অর্থ নেয়া বেআইনি ও অপরাধ। যদি তা ভর্তি ও সেশন ফির টাকাও হয় তবে তা সুবিধাজনক সময়ে বা পরে নেয়া যাবে। কোনো অবস্থায় ওই দিন নয়। কেউ টাকার বিনিময় বই নিয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ শুনেছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ছগির হোসেন/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।