বেনাপোলে ভারতীয় ট্রাকচালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গাফিলতি
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কাস্টমসে দীর্ঘদিন থার্মাল স্ক্যানারের মনিটর নষ্ট থাকায় গত ১৭ জানুয়ারি থেকে হ্যান্ড থার্মাল দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছিল। দীর্ঘ ৮ মাস নষ্ট থাকার পর করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নতুন থার্মাল স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে ভারত ভ্রমণ শেষে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় দেশি-বিদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের অতিদ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাবে।
এদিকে পাসপোর্টযাত্রীদের ঠিকমত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আসা শত শত ট্রাকচালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ঠিকমত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বন্দর এলাকা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ট্রাকচালকদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ঠিকমত তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় এখানে দায়িত্বরতরা গা ছাড়া ভাব নিয়ে কাজ করছেন। বন্দরের কর্মকর্তারা ট্রাকচালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা উদ্বোধন করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন।
জানা গেছে, প্রতিদিন বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার দেশি-বিদেশি মানুষ যাতায়াত করেন শুধু পাসপোর্টযাত্রী হিসেবে। এছাড়াও এ পথে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০-৪০০ পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে ৮০০ চালক-হেলপার। এছাড়াও আসে ভারত থেকে বন্ধন নামে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং পণ্যবাহী ওয়াগন ট্রেন। কিন্তু এসব ট্রাক ড্রাইভারদের ও রেলের যাত্রীদের পরীক্ষা করার নির্দেশ থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মীরা নানা অজুহাতে তাদের ঠিকমত পরীক্ষা করছেন না। প্রথম দিকে দুই-একদিন লোক দেখানো একটি হ্যান্ড স্ক্যানার নিয়ে পরীক্ষার কাজ চালালেও এখন চলছে ফাঁকিবাজি। বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত আমদানি-রফতানি হয়। সেখানে স্ট্যান্ডবাই স্বাস্থ্যকর্মী থাকার কথা বলা হলেও বিকেলের পর তাদের ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় না। ফলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই নির্বিঘ্নে বেনাপোল বন্দর ও আশেপাশের এলাকায় চলে আসছে শত শত ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপাররা।
বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখায় সকাল থেকে রাত অবধি কাজে নিয়োজিত থাকা মোশারাফ হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যে একজন স্বাস্থ্যকর্মী এসে কয়েকজনের কপালে মেশিন ঠেকিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। ঘণ্টা খানেক পর আবার আসেন। আবার চলে যান। এভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা দেশের জন্য ক্ষতিকর।
বুধবার (১১ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে চেকপোস্টে সরেজমিনে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবহৃত খালি চেয়ারটি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে সাংবাদিকরা এসেছেন শুনে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। কোথায় ছিলেন প্রশ্ল করলে তিনি জানান বাথরুমে গিয়েছিলাম। অথচ তিনি ইমিগ্রেশনের মধ্যে থার্মাল স্ক্যানারের মনিটরের পাশে চেয়ারে বসে সহকর্মীর সঙ্গে গল্প করছিলেন।
বেনাপোল রেলস্টেশন এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, ভারতীয় ট্রেনে যাত্রী এলে তেমন কোনো পরীক্ষা করতে দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো একজন স্বাস্থ্যকর্মী এখানে কিছু যাত্রীদের পরীক্ষা করলেও ভারত থেকে আগত সকল যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে আল আমিন নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ট্রাকচালকরা এবং হেলপাররা আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আমদানি পণ্যের জন্য ২৪ ঘণ্টা সীমান্ত খোলা থাকলেও সেখানে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।
অপরদিকে বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ও চেকপোস্ট এলাকায় রেড এলার্ট জারি করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। কোনো যাত্রী ও বাংলাদেশি ট্রাকচালক-হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া প্রবেশ করতে দিচ্ছে না তারা। কিন্তু বেনাপোলে তার ব্যতিক্রম।
বেনাপোাল ইমিগ্রেশন মেডিকেল টিমের সদস্য ডা. হাসানুজ্জামান বলেন, থার্মাল স্ক্যানারটি অত্যন্ত আধুনিক। এটা বাইরে থেকে প্রতিটি যাত্রীর তাপমাত্রা অটোমেটিক নির্ণয় করতে পারে। এছাড়া যার তাপমাত্রা যত বেশি সেখানে তার শরীরের ওপর হাই লেখা দেখায় এই স্ক্যানারটি।
তিনি আরও বলেন, যার তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রির ওপর তাকে আমরা আমাদের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আজিম উদ্দিনের নিকট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আজিম উদ্দিন বলেন, বেনাপোল ইমিগ্রেশন কাস্টমসের স্বাস্থ্য বিভাগের থার্মাল স্ক্যানারের মনিটর দীর্ঘদিন নষ্ট থাকায় হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়েই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে একটি নতুন থার্মাল স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করায় বুধবার সকাল থেকে নতুন স্ক্যানার দিয়ে পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া আমদানি-রফতানি পণ্য বহনকারী ভারতীয় ট্রাকচালক, হেলপার ও রেলওয়ে স্টেশনে বন্ধন ট্রেনের পাসপোর্টযাত্রীদের হ্যান্ড থার্মাল দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনাবাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে সীমান্তবর্তী জেলা যশোরের শার্শা উপজেলায় ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সন্দেহে কোনো রোগী আসলে তাকে আলাদা কেবিন বা বেডে না নিয়ে প্রথমে পরীক্ষা করা হবে। তারপর করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলে তখনই করোনাভাইরাস সেলে নিয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
জামাল হোসেন/আরএআর/এমকেএইচ