করোনায় স্থবির কসবা সীমান্ত হাট

আজিজুল সঞ্চয়
আজিজুল সঞ্চয় আজিজুল সঞ্চয়
প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ১৮ মার্চ ২০২০

‘অসম’ বাণিজ্যের কারণে আগে থেকেই চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাটের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তুলনায় খুবই কম তাদের বেচাকেনা। এবার প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য সীমান্ত হাটের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে করোনার কোনো প্রভাব পড়েনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের পণ্য রফতানি কার্যক্রমে।

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর গত রোববার (১৫ মার্চ) থেকেই স্থবির হয়ে পড়েছে কসবা সীমান্ত হাটের সার্বিক কার্যক্রম। ব্যবসায়ীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধের কথা না জানানোয় রোববারও হাটে এসে ফিরে গেছেন তারা। অনেক ক্রেতাও হাটে এসে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। হাট বন্ধ থাকায় প্রতি হাটে ৮-১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি থেকে বঞ্চিত হবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পচনশীল পণ্য বিক্রেতারা। এতে করে লোকসান গুণতে হবে তাদের। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সীমান্ত হাট।

কসবা উপজেলার তারাপুর ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর সীমান্তে নির্মিত হাটটি ২০১৫ সালের ৬ জুন যাত্রা শুরু করে। হাটে ভারতের ৫০টি এবং বাংলাদেশের ৫০টি দোকান রয়েছে। প্রতি রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে হাটের বেচাকেনা। ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশি পণ্যগুলোর মধ্যে জামদানি শাড়ি, ফলমূল, শুটকি, কুটির শিল্প ও প্লাস্টিক পণ্য, লৌহজাত পণ্য এবং ক্রোকারিজ পণ্যসামগ্রীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

এর বিপরীতে বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় প্রসাধনী, বিস্কুট, চকলেট, চাপাতা, শাড়ি, থ্রী-পিস ও শিশুদের ডায়াপারের চাহিদা বেশি। হাটে বাংলাদেশি পণ্যের তুলনায় ভারতীয় পণ্য বেচাকেনাই বেশি হয়। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি হাটে জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকার পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করে থাকেন। আর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার পণ্য।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গেল বছরও অতিথি পাস কার্ড ইস্যু বন্ধ থাকায় প্রায় দুই মাস হাট বসেনি। কারণ অতিথি পাস নিয়ে যারা ঢোকেন তারাই মূলত হাটের বড় ক্রেতা। তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করেই টিকে আছেন ব্যবসায়ীরা। তাই অতিথি পাস বন্ধ থাকায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের কেউই হাটে আসেননি। তবে ব্যবসায়ীদের সরকারকে বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা ঠিকই দিতে হয়েছে।

ওয়ালিউল্লাহ সরকার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদেরকে হাট বন্ধের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। রোববার হাটে গিয়ে জেনেছি অনির্দিষ্টকালের জন্য হাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনিতেই আমাদের পণ্য বেচাকেনা কম, এখন বন্ধের কারণে আরও লোকসানে পড়তে হবে। ব্যবসা হোক বা না হোক প্রতিবছর সরকারের ঘরে ১০ হাজার টাকা ফি তো আমাদের ঠিকই দিতে হবে।

মো. মন্টু মিয়া নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের ব্যবসা এমনিতেই ভালো না। লোকসান দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি ব্যবসা। হাট বন্ধ থাকলেও সরকারের ঘরে টাকা তো ঠিকই জমা দিতে হবে। কখন হাট খুলবে জানি না, এভাবে আর কতদিন লোকসান দিয়ে ব্যবসা করব?

তবে করোনা ভাইরাসের কোনো প্রভাব পড়েনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের পণ্য রফতানি কার্যক্রমে। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই বন্দর দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চলছে পণ্য রফতানি কার্যক্রম। প্রতিদিন কয়লা, পাথর, মাছ, শুটকি, প্লাস্টিক সামগ্রী ও খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই অন্তত ৪০-৫০টি ট্রাক যাচ্ছে ভারতের আগরতলায়। সোমবারও (১৬ মার্চ) আগরতলায় পণ্য রফতানি হয়েছে। রফতানিকৃত এসব পণ্য ভারতের আগরতলা থেকে দেশটির সেভেন সিস্টার্যখাত সাতটি রাজ্যে সরবরাহ করা হয়।

মূলত শতভাগ রফতানিমুখী হওয়ায় এ বন্দরে করোনা ভাইরাসের কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদন গড়ে প্রায় দুই-তিন লাখ ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করা হচ্ছে আগরতলায়। কোনো কোনোদিন আরও বেশিও হয়। তবে পণ্য রফতানি থেকে সরকার কোনো রাজস্ব না পেলেও বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিটেন্স পেয়ে থাকে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী রাজীব উদ্দিন ভূইয়া জানান, এখন পর্যন্ত আমাদের পণ্য রফতানি কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়েনি। রফতানি আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক পণ্য যাচ্ছে আগরতলায়। মূলত শতভাগ রফতানিমূলক বন্দর হওয়ায় কোনো প্রভাব পড়েনি।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকলেও আমাদের পণ্য রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে দুই-তিন লাখ ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি হচ্ছে আগরতলায়। অনেকসময় এই পরিমাণ আরও বেশি হয়।

কসবা সীমান্তহাটের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মিতু মরিয়ম বলেন, হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাট বন্ধ থাকবে। ভারতের হাট ব্যবস্থাপনা কমিটিও হাট বন্ধ করে দিয়েছে। আবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে হাট খুলে দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে। সেটার তুলনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি খুবই সামান্য। তারপরও তাদের যদি কোনো অসন্তোষ থাকে তাহলে লিখিতভাবে আমাদের জানালে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব আমরা করব। হাট থেকে সরাসরি আমরা কোনো রাজস্ব পাইনা, টিকিট বিক্রির টাকা এবং ব্যবসায়ীদের নবায়ন ফি’র টাকাই সরকারের আয়।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।